ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, নির্বাচনের আগে জুলাই সনদকে আইনি বৈধতা দিতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে এই সনদ প্রণয়ন করা হলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলে ‘তালবাহানা’ চলছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার রাতে বরিশালের বাবুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত এক জনসভা ও ওয়াজ-মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চরমোনাই পীর বলেন, “সকল দলের ঐকমত্যে গঠিত জুলাই সনদ জাতির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি। এই সনদের আইনি রূপ না দিলে জনগণ সেটাকে এক ধরনের প্রতারণা বলবে। প্রয়োজনে গণভোটের মাধ্যমে এর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে, তবে সেটা অবশ্যই নির্বাচনের আগেই করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “কোনো দল ক্ষমতায় গিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবে—এমন প্রতিশ্রুতি এখন দেওয়া মানে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। এটা হবে এক বিরাট শুভঙ্করের ফাঁকি।”
“ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠাই ইসলামী আন্দোলনের লক্ষ্য”
বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা ন্যায়, ইনসাফ ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, “এই দলের কেউ চাঁদাবাজি করে না, দখলবাজি করে না, দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে না, কিংবা পার্সেন্টেজ বা কমিশন খায় না। গত ৫৩ বছর দেশে যে অশান্তির আগুন জ্বলছে, সেই আগুন নেভাতে পারে একমাত্র শান্তির হাতপাখা।”
তিনি আহ্বান জানান, “আগামী নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে হাতপাখা মার্কার প্রার্থী উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলামকে বিজয়ী করতে হবে। তিনি নির্বাচিত হলে বাবুগঞ্জ-মুলাদী উপজেলা হবে পার্সেন্টেজ, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিমুক্ত এলাকা।”
সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়
জনসভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের প্রার্থী উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, সংখ্যানুপাতিক (Proportional Representation–PR) ভোট পদ্ধতি ছাড়া দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ও ন্যায়ভিত্তিক নির্বাচন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, “বিশ্বের মোট ৯১টি দেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়। এর মধ্যে উন্নত বিশ্বের ৩৪টি দেশের ২৫টিতেই এই পদ্ধতি চালু। অথচ আমাদের দেশের বড় দলগুলো বলে তারা নাকি পিআর বোঝে না! কেন বোঝে না? কারণ পিআর চালু হলে তাদের মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ থাকবে না, আর লুটপাটও বন্ধ হয়ে যাবে।”
সিরাজুল ইসলাম বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে জনগণ কোনো ব্যক্তিকে নয়, দলকে ভোট দেয়। যারা আজ পিআর বোঝে না, তারাই একসময় কেয়ারটেকার সরকারও বুঝত না। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর পর সেই কেয়ারটেকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। ঠিক তেমনি আজ যারা পিআরের বিরোধিতা করছে, ভবিষ্যতে তারাও এই পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলন করতে বাধ্য হবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে দেশে আবার ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হবে। ইসলামী আন্দোলন দেশের মানুষকে সেই অন্ধকার থেকে রক্ষা করতে চায়।”
রাষ্ট্রসংস্কার ও গণহত্যার বিচার দাবি
সভায় বক্তারা রাষ্ট্রসংস্কার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বাস্তবায়নসহ রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের আহ্বান জানান। বক্তাদের মতে, দেশের রাজনীতিতে ন্যায়ের শাসন ও সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হলে ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও স্থানীয় নেতারা, আলেম-ওলামা এবং বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited