বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এটি আরও ঘনীভূত হয়ে আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যার দিকেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির নাম হতে পারে ‘মন্থার’, যা থাই ভাষার একটি শব্দ—অর্থ ‘সুন্দর ফুল’।
যদিও এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে সরাসরি আঘাত হানবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা, তবে এর প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকবে এবং দেশের পশ্চিমাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের পথে ‘মন্থার’
রোববার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি ভোর ৬টার দিকে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, “নিম্নচাপটি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে আজ সন্ধ্যার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে এর মূল প্রভাব পড়বে ভারতের ওডিশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে।”
তিনি আরও বলেন, “ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘলা থাকবে এবং বৃষ্টি হতে পারে। আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।”
সাগর উত্তাল, জেলেদের সতর্কবার্তা
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি নম্বর-৩ অনুযায়ী, নিম্নচাপটি বর্তমানে ১১ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে।
এটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার থেকে ১২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা থেকে ১৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা বন্দর থেকে ১২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের আশপাশের সাগর এখন উত্তাল অবস্থায় রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা বলেন, “আজ উপকূলীয় এলাকায় ১ নম্বর সতর্কসংকেত জারি আছে। আগামীকাল পরিস্থিতি অনুযায়ী সংকেত বাড়ানো হতে পারে।”
নাম ‘মন্থার’—থাইল্যান্ডের প্রস্তাবিত
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, যদি গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তাহলে এর নাম হবে ‘মন্থার’ (Mongtha)। নামটি দিয়েছে থাইল্যান্ড। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (WMO)–এর আঞ্চলিক কমিটি, যেখানে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ যুক্ত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে স্বাভাবিক নিম্নচাপ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুমের শেষভাগে বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়া নতুন কিছু নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক (অব.) ড. রাশেদ মাহমুদ বলেন, “অক্টোবর থেকে নভেম্বর সময়টিই ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের দ্বিতীয় পর্ব। সাধারণত বড় ঘূর্ণিঝড়গুলো হয়ে থাকে নভেম্বর মাসে। তাই এখনকার এই নিম্নচাপ মৌসুমি প্রক্রিয়ারই অংশ।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়গুলো অনিয়মিত ও তীব্রতর হচ্ছে। তাই উপকূলীয় জনগণ ও জেলেদের সতর্ক থাকা জরুরি।”
সম্ভাব্য প্রভাব ও প্রস্তুতি
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশের উপকূলে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা নেই। তবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি যদি প্রত্যাশিত পথে ভারতের দিকে অগ্রসর হয়, তবে এর প্রান্তীয় প্রভাব বাংলাদেশে সীমিত আকারে অনুভূত হবে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, সতর্ক সংকেত বজায় থাকা পর্যন্ত জেলেরা যেন গভীর সাগরে না যায় এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোর প্রশাসন যেন সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকে।








সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited