বাংলাদেশ থেকে কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। এর আগে চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো কাঁচা আম আমদানি করে দেশটি। এবার তারা বাংলাদেশের অন্যান্য ফলের বাজারও খুলে দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত বাংলাদেশ–চীন গ্রিন টেক্সটাইল এক্সপো–২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “চীনের বাজারে এখন বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের উপস্থিতি বাড়ছে। ইতিমধ্যেই আমরা বাংলাদেশের কাঁচা আম আমদানি শুরু করেছি, এবং এখন কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানির প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছি। আমরা চাই বাংলাদেশের মানসম্পন্ন ফল চীনের বৃহৎ বাজারে নিয়মিত প্রবেশ করুক।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশি কৃষিপণ্য এখন বিশ্ববাজারে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত তৈরি করছে। আমরা চাই, দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়ুক, যাতে কৃষি ও বাণিজ্য উভয়ক্ষেত্রেই পারস্পরিক লাভ নিশ্চিত হয়।”
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, চীন টানা ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। বর্তমানে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। তিনি বলেন, “চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। গত এক বছরে ২০টিরও বেশি চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।”
চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশটি ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শতভাগ করযোগ্য পণ্যের ওপর শূন্য-শুল্ক সুবিধা প্রদান করছে। রাষ্ট্রদূতের ভাষায়, “এটি দুই দেশের সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি চীনের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।”
গ্রিন টেক্সটাইল এক্সপো–২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে সবুজ প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “চীন বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে বস্ত্র শিল্পের জ্বালানি–সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব উপকরণ এবং স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং প্রবর্তনে কাজ করতে চায়।”
রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন একটি ‘টেকসই সবুজ শিল্প শৃঙ্খল’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। যদি আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থায় একসঙ্গে কাজ করি, তবে বাংলাদেশ বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে আরও শক্ত অবস্থান নিতে পারবে।”
২০২৫ সালকে চীন–বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বর্ষ হিসেবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা চাই এই বছরটি দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার নতুন অধ্যায় সূচনার বছর হোক। আমাদের সম্পর্ক সবসময় পারস্পরিক লাভ ও আস্থার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে।”
তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের ‘গ্লোবাল গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভ (জিজিআই)’–এর কথা উল্লেখ করে বলেন, “চীন বিশ্বাস করে, সার্বভৌম সমতা, আন্তর্জাতিক আইন, বহুপাক্ষিকতা ও জনগণকেন্দ্রিক উন্নয়ন–এই নীতিগুলোই ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তুলতে পারে। বাংলাদেশ এই দর্শনের এক অনন্য অংশীদার।”
তিন দিনের এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে স্যাভর ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। যৌথভাবে অংশগ্রহণ করেছে বাংলাদেশে চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন (সিইএবি)। কৌশলগত অংশীদার হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং সাংহাই ক্লাইমেট উইক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সহ–সভাপতি (অর্থ) মিজানুর রহমান, বিটিএমসির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস. এম. জাহিদ হাসান, বিসিসিআই সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, সিইএবি সভাপতি হান কুন, এবং বাণিজ্য ও শিল্প খাতের অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং এটি পারস্পরিক আস্থা ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন সহযোগিতার প্রতীক। কৃষি ও শিল্প—দুই খাতেই এই অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে।
