আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) সেনাবাহিনীসহ সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছে। নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ও অবাধ রাখতে এই বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসির জনসংযোগ শাখার সহকারী পরিচালক মো. আশাদুল হক জানিয়েছেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সভায় চারজন নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা সংস্থা, ফায়ার সার্ভিস, সাইবার ইউনিট এবং স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা
ইসি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচনী মাঠের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী নিরাপত্তা জোন নির্ধারণ এবং ভোটের আগে ও পরে সম্ভাব্য সংঘাত প্রতিরোধে বিশেষ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে। কমিশন চায়, কোনো অবস্থাতেই যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না হয় বা কোনো গোষ্ঠী ভয়-ভীতির মধ্যে না থাকে। এজন্য মাঠ প্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে সমন্বিত নির্দেশনা দেওয়া হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য রোধে নজরদারি
ইসির আলোচ্যসূচিতে রয়েছে আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রচার রোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ। নির্বাচন ঘিরে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা, অপপ্রচার বা ভুয়া সংবাদ যাতে জনমনে প্রভাব না ফেলে, সে বিষয়ে কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত মনিটরিং সেল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “ডিজিটাল যুগে নির্বাচন শুধু মাঠের নিরাপত্তা নয়, অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
অবৈধ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ও সেনা মোতায়েন পরিকল্পনা
বৈঠকে আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে—অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ। নির্বাচনকালীন সময়ে অস্ত্রের অপব্যবহার, আতঙ্ক সৃষ্টি বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা রোধে কঠোর অভিযান চালানো হবে।
সেই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনকালীন সহায়তাকারী বাহিনী হিসেবে কীভাবে মোতায়েন করা হবে—সেই পরিকল্পনাও আজ চূড়ান্ত হতে পারে। পার্বত্য ও দুর্গম এলাকায় নির্বাচনী উপকরণ পরিবহনে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রস্তাবও আলোচনায় আসবে বলে জানা গেছে।
বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা
নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণও আলোচ্য বিষয়ের অন্যতম। তাদের চলাচল, তথ্য সংগ্রহ এবং ভোটগ্রহণের দিন মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তা ও সহায়তা প্রদানে করণীয় ঠিক করা হবে।
ফেব্রুয়ারিতে ভোট, ডিসেম্বরেই তফসিল ঘোষণা
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেছে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ চলছে। আর ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই, নির্বাচনের সব প্রস্তুতি এমনভাবে গুছিয়ে নিতে যাতে ভোটের দিন শুধু ভোটগ্রহণই হয়—কোনো বিশৃঙ্খলা বা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যেন না ঘটে।”
সিইসির বার্তা: “সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়”
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, “সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া। প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দল ও ভোটার—সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে।”
আজকের এই বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা প্রস্তুতির প্রথম পর্যায় সম্পন্ন করতে যাচ্ছে। বৈঠক শেষে কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।
জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সর্বোচ্চ আগ্রহ বিরাজ করছে। নির্বাচনকালীন শান্তি, সহনশীলতা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে ইসি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই যৌথ উদ্যোগ সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited