নির্বাচনী প্রতীকের তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক না থাকায় ন্যাশনাল কনজারভেটিভ পার্টি (এনসিপি)-কে সেই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংবিধান ও আইনের ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়—তালিকায় অনুপস্থিত কোনো প্রতীক দেওয়ার এখতিয়ার কমিশনের নেই।
রোববার সকালে সিলেট পুলিশ লাইনসে নির্বাচনী দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে পুলিশের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
‘আইনের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নয়’
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন,
“নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। আমরা আইন ও বিধি অনুযায়ী কাজ করি। প্রতীকের যে তালিকা সরকারিভাবে গেজেটে প্রকাশিত আছে, তার বাইরে কোনো প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দেওয়া সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন,
“আইন যেটা বলে, আমরা সেটাই মেনে চলি। কেউ কোনো প্রতীক দাবি করলেই তা দিতে হবে—এমন কোনো বিধান নেই। কমিশন সংবিধান ও নির্বাচন আইনের আওতাতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।”
সূত্র মতে, এনসিপি সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছে শাপলা প্রতীক বরাদ্দের আবেদন করেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের হালনাগাদ প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক অন্তর্ভুক্ত না থাকায় ইসি আবেদনটি বিবেচনা করতে পারেনি।
‘নির্বাচন ফেব্রুয়ারির আগেই হবে’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে সাম্প্রতিক জল্পনা–কল্পনার বিষয়ে ইসি আনোয়ারুল বলেন,
“নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন না হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। অনেক কিছুই গণমাধ্যমে এসেছে, কিন্তু বাস্তবে তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমরা আশা করছি, রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, কমিশন নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভোটগ্রহণে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
“সবার সহযোগিতায় একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনই আমাদের লক্ষ্য।”
নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ে আশাবাদী ইসি
সিলেট পুলিশ লাইনসে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান, ও পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশনার বলেন,
“প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানো হচ্ছে। আমরা চাই, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ যেন নিরাপদ থাকে এবং ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারেন।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন,
“আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে না। নির্বাচনে নিয়োজিত সব বাহিনীকে আমরা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।”
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে নিরপেক্ষ অবস্থান
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি নিয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন,
“নির্বাচন পদ্ধতি রাজনৈতিক বিষয়। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মন্তব্য করা শোভন নয়। রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করে যে পদ্ধতি নির্ধারণ করবে, কমিশন সেই অনুযায়ী কাজ করবে।”
তিনি আরও বলেন, কমিশনের মূল দায়িত্ব হলো আইন অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করা, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দেওয়া নয়।
নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতের তাগিদ
নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নানা তথ্য ও গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা অনেক সময় জনগণকে বিভ্রান্ত করে।
“নির্বাচন নিয়ে যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে চায়। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি, যাচাই না করে কোনো খবর বিশ্বাস করবেন না।”
তিনি যোগ করেন,
“ইসি সব সময় স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় রাখবে। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই—জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা।”
সিলেট অঞ্চলে প্রস্তুতি জোরদার
নির্বাচন কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রতিটি জেলায় পর্যায়ক্রমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ সময় কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন,
“নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নির্ভর করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাজের ওপর। তাই দায়িত্ব পালন করতে হবে সততা, দক্ষতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে।”











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited