বিশ্ব রাজনীতির নজর আবারও ঘুরছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দিকে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের sidelines-এ দেখা করবেন বিশ্বের দুই প্রভাবশালী নেতা — যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ, প্রযুক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
“দক্ষিণ কোরিয়ায় দেখা হবে”— ট্রাম্পের ঘোষণা
ফক্স নিউজের জনপ্রিয় টকশো ‘সানডে মর্নিং ফিউচারস’-এ এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন,
“আমরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেখা করতে যাচ্ছি। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট শি এবং আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে আমার বৈঠক হবে। আমাদের মধ্যে একটি পৃথক বৈঠকেরও পরিকল্পনা রয়েছে।”
এই ঘোষণার পরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে—দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বরফ কি এবার গলবে?
গিয়ংজুতে এপেক সম্মেলন
আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার ঐতিহাসিক শহর গিয়ংজুতে অনুষ্ঠিত হবে এবারের এপেক সম্মেলন।
সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন।
আয়োজক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যে নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ট্রাম্প ও শির মধ্যে বৈঠকটি হবে সম্মেলনের সবচেয়ে আলোচিত ইভেন্ট।
বাণিজ্যযুদ্ধের ছায়া
ট্রাম্প ও শির এই বৈঠক এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন,
“চীন যদি বাণিজ্যে ন্যায্যতা না আনে, তাহলে তাদের পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে।”
চীনের বিরল খনিজ রপ্তানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রতিক্রিয়াতেই যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক হুমকি আসে।
এর ফলে বিশ্ব শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দেয় এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে লিখেন,
“যুক্তরাষ্ট্র চীনকে সাহায্য করতে চায়, ক্ষতি করতে নয়!”
যা অনেকের মতে, আসন্ন বৈঠকের আগে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত বহন করে।
ক্ষমতায় ফেরার পর প্রথম সাক্ষাৎ
গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউসে ফেরেন। পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর এটাই হতে যাচ্ছে ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের প্রথম সরাসরি বৈঠক।
২০১৮–২০১৯ সালের বাণিজ্যসংঘাতের সময় দুই নেতার মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছিল, তবে তখন থেকে সম্পর্ক ধীরে ধীরে অবনতি ঘটে।
নতুন প্রশাসনের সময় ট্রাম্প বারবার চীনের বাণিজ্যনীতি, প্রযুক্তি খাত ও দক্ষিণ চীন সাগরে প্রভাব বিস্তারের নীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ফলে গিয়ংজু বৈঠকটি শুধু আনুষ্ঠানিক সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টি
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৈঠকটি যদি গঠনমূলক হয়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এক বিশ্লেষক বলেন,
“চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এখনো উত্তেজনাপূর্ণ। তবে দুই নেতার সরাসরি আলোচনাই হয়তো নতুন করে আস্থার পথ খুলে দিতে পারে।”
অন্যদিকে, বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লি চেন মন্তব্য করেন,
“চীনও এখন বাস্তববাদী অবস্থান নিচ্ছে। শি জিনপিং চাইবেন আলোচনার মাধ্যমে অন্তত আংশিক সমঝোতা তৈরি করতে, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে।”
বিশ্বের দৃষ্টি গিয়ংজুর দিকে
বিশ্বের অর্থনৈতিক ভারসাম্য এখন অনেকটাই নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর। এই দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা না থাকলে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলসহ বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতিতেও প্রভাব পড়তে পারে।
সুতরাং, এপেক সম্মেলনের মূল আলোচনার বাইরেও ট্রাম্প-শি বৈঠকই হয়ে উঠতে পারে পুরো সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু।
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গণমাধ্যম ইতোমধ্যেই এই সাক্ষাৎকে ‘গ্লোবাল পলিটিক্সের মাইলফলক ইভেন্ট’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে।
