ওয়ানডে ফরম্যাটে টানা ব্যর্থতার ধারা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর মিশনে নামছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
লক্ষ্য একটাই—হতাশা ভুলে জয় দিয়ে নতুন শুরু।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে টাইগারদের চিত্রটা অবশ্য সুখকর নয়। সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পড়েছিল। তিন ম্যাচের একটিতেও ব্যাটিং কিংবা বোলিংয়ে জ্বলে উঠতে পারেননি মিরাজ-তাসকিনরা। এমনকি শেষ দুই ম্যাচে ৩০ ওভারের মধ্যেই অলআউট হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া দীর্ঘ ব্যর্থতার পথচলায় এখন পর্যন্ত টানা চারটি ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে টাইগাররা। ওই সময়ের মধ্যে খেলা ১৪ ম্যাচের মধ্যে জয় এসেছে মাত্র দুইটিতে। এমন পরিস্থিতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার বড় সুযোগ হয়ে এসেছে।
ঘরের মাঠে পুরনো আত্মবিশ্বাস
যদিও পরিসংখ্যান বলে, বিদেশের মাটিতে ব্যর্থ হলেও ঘরের মাঠে বাংলাদেশ বরাবরই আলাদা রূপে খেলে। ২০২৪ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছিল টাইগাররা।
এই জয়ই মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বাড়তি অনুপ্রেরণা দেবে বাংলাদেশকে।
আরেকটি পরিসংখ্যানও বাংলাদেশকে উৎসাহ দেবে—২০২১ সালে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগাররা।
তবে সামগ্রিক মুখোমুখি রেকর্ডে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ। দুই দলের ৪৭ ম্যাচের লড়াইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে ২৪টিতে, বাংলাদেশ ২১টিতে। বাকি দুই ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল।
মিরপুরের উইকেট ও কন্ডিশন ফ্যাক্টর
ধীরগতির উইকেট, টার্নিং পিচ এবং স্পিন-বান্ধব পরিবেশ—মিরপুরে সবসময়ই বাংলাদেশের পক্ষে যায়। ফলে স্বাগতিকরা এবারও ফেভারিট হিসেবেই মাঠে নামবে।
তবে ক্যারিবীয় শিবিরে কিছুটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ড্যারেন স্যামি জানিয়েছেন, মিরপুরের পিচ নিয়ে তিনি কিছুটা চিন্তিত। তাঁর ভাষায়,
“আমি আগে কখনও এমন উইকেট দেখিনি। তবে আমরা জানি উপমহাদেশে খেলা সবসময় চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের জন্য।”
স্যামি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সম্প্রতি ভারতের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে কাজে দেবে তার দলকে। “ভারতের মতো কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের ব্যাটসম্যানদের মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে,” বলেন তিনি।
দলে নতুন মুখ অঙ্কন, ফিরলেন সৌম্য
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ভরাডুবি হলেও বাংলাদেশ দলে তেমন কোনো বড় পরিবর্তন আসেনি। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ সৌম্য সরকার। বাদ পড়েছেন নাইম শেখ ও পেসার নাহিদ রানা।
মেহেদি হাসান মিরাজের নেতৃত্বে সাজানো স্কোয়াডে তরুণ-অভিজ্ঞ মিশ্রণে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছে নির্বাচকরা। বোলিং আক্রমণে থাকছেন তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ ও তানজিম হাসান।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ
তানজিদ হাসান, সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (উইকেটরক্ষক), শামীম হোসেন, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও তানভীর ইসলাম।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দল
শাই হোপ (অধিনায়ক), অ্যালিক আথানাজে, আকিম অগাস্ট, জেদিয়া ব্লেডস, কেসি কার্টি, রোস্টন চেজ, জাস্টিন গ্রেভস, আমির জাঙ্গু, শামার জোসেফ, ব্র্যান্ডন কিং, গুদাকেশ মোতি, খারি পাইরি, শেরফেন রাদারফোর্ড, জেইডেন সিলস ও রোমারিও শেফার্ড।
নতুন করে জেগে ওঠার প্রত্যয়
সাম্প্রতিক ব্যর্থতা ভুলে নতুন উদ্যমে মাঠে নামতে চায় টাইগাররা। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই সিরিজ কেবল জয়ের লড়াই নয়, বরং আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধারের লড়াইও।
ঘরের মাঠে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে পারলে দলের মনোবল যেমন বাড়বে, তেমনি ভরাডুবির ধারাও থামবে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা তাই একটাই প্রার্থনা করছেন—“পুরনো রূপে ফিরুক টাইগাররা।”
