জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে ‘জুলাই সনদ ২০২৫’। দেশের ২৫টি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে স্বাক্ষরিত এই সনদকে বাংলাদেশের নতুন গণতান্ত্রিক যাত্রার সূচনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, যারা এখনও সনদে স্বাক্ষর করেননি, তারাও শিগগিরই যুক্ত হবেন এই ঐতিহাসিক উদ্যোগে।
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,
“সব রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছেন। যারা দুই-একজন স্বাক্ষর করেননি, আশা করি তারাও ভবিষ্যতে করবেন। সেটা উন্মুক্ত রাখা আছে।”
তিনি বলেন, “জুলাই সনদ-২০২৫ আমাদের জাতির ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। শহীদদের আত্মত্যাগ, জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রত্যাশা—সবকিছুর মিলনে আজকের দিনটি ঐতিহাসিক।”
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর পথে নতুন যাত্রা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আজকের এই সনদ কেবল একটি রাজনৈতিক ঘোষণা নয়, বরং এটি আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোর পুনর্গঠনের অঙ্গীকার। সাংবিধানিক সীমারেখার মধ্যে থেকে রাষ্ট্রের সব অঙ্গের ভারসাম্য রক্ষা করে আমরা একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।”
তিনি আরও যোগ করেন, “রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ যেন অন্য অঙ্গের ওপর কর্তৃত্ব না দেখায়, সেই ভারসাম্য নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে এই সনদ বড় ভূমিকা রাখবে।”
সালাহউদ্দিন আহমদ বিশ্বাস করেন, এই সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠিত হবে এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।
সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই নির্বাচন
‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে হবে’—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে—বাংলাদেশের প্রত্যেক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকা থেকে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনশ সদস্যের জাতীয় সংসদ গঠিত হবে, সঙ্গে থাকবে সংরক্ষিত নারী আসন। তাই এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি আরও জানান, “প্রধান উপদেষ্টা যদি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় বসতে চান, আমরা তাতে অংশ নেব। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে—একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা।”
ইউনূসের বার্তা: ঐক্যের সুরেই হবে সুষ্ঠু নির্বাচন
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত হন দক্ষিণ প্লাজায়।
তিনি বলেন, “জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা যে ঐক্যের সুর বাজালাম, সেই সুর নিয়েই নির্বাচনে যাব। যারা আজ স্বাক্ষর করেছেন, তারা প্রয়োজনে আবার বসবেন—কীভাবে নির্বাচন আরও সুন্দর করা যায়, তা নির্ধারণ করবেন। যেনতেন নির্বাচন করে কোনো লাভ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষ যেন মনে রাখে, এই সনদে যারা স্বাক্ষর করেছেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করেছেন। নিজেদের নির্বাচন আমরা নিজেরাই করব, কাউকে এসে আমাদের সোজা করতে হবে না।”
২৫ দলের অংশগ্রহণে ঐতিহাসিক মুহূর্ত
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগে একে একে সনদে স্বাক্ষর করেন বিএনপি, জামায়াতসহ ২৫টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। এই স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় রচিত হলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, জুলাই সনদ কেবল রাজনৈতিক ঐকমত্যের দলিল নয়—এটি গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের সূচনা। বহুদিন ধরে বিভক্ত রাজনীতির যে দেয়াল ছিল, সেই দেয়ালের প্রথম ইট আজ নড়ে গেছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আজকের দিনটি কেবল সূচনা। সামনের দিনগুলোতে আমাদের অনেক কাজ বাকি। জনগণের আশা পূরণে, রাষ্ট্রের ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারে জুলাই সনদ হবে আমাদের পথনির্দেশ।”
