বলিউডের ঝলমলে পর্দায় তিনি যেমন অভিনয়ের জাদু দেখিয়েছেন, বাস্তব জীবনে ঠিক তেমনই আলো ছড়াচ্ছেন মানবতার মঞ্চে।
ইঞ্জিনিয়ার থেকে বলিউড তারকা হয়ে ওঠা কৃতি শ্যানন এবার নিজের তারকাখ্যাতি ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ মঞ্চে—জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন ২০২৫’-এ।
অভিনয় ও চলচ্চিত্র প্রযোজনার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডেও নিজেকে যুক্ত রেখেছেন এই অভিনেত্রী। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি উপস্থিত হলেন এমন একটি বৈশ্বিক আয়োজনে, যেখানে মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল নারীর স্বাস্থ্য ও সুস্থ জীবনযাপন।
“নারীর স্বাস্থ্য কোনো অবহেলার বিষয় নয়”
সংবাদ প্রতিদিন জানিয়েছে, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলন ২০২৫’-এর প্রধান আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃতি বলেন,
“বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলা হয় খুব কম। এই মানসিকতা বদলানো দরকার। মনে রাখতে হবে—নারীর স্বাস্থ্য অবহেলার বিষয় নয়, বরং এটি পরিবারের ও সমাজের শক্তির ভিত্তি।”
তিনি আরও বলেন,
“একজন নারী যদি নিজের যত্ন না নিতে পারেন, তবে তিনি পরিবারের অন্য সদস্যদের যত্ন নেওয়াও সম্ভব নয়। তাই প্রথমেই নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে হবে। নারীই পরিবারের প্রাণকেন্দ্র; তাঁকে সুস্থ রাখা মানে পুরো পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা।”
কৃতির এই বক্তব্যে সম্মেলনের অংশগ্রহণকারীরা প্রবল করতালিতে সাড়া দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বক্তব্যের ভিডিও মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
বার্লিনের বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় মুখ
জার্মানির রাজধানী বার্লিনে প্রতিবছর আয়োজিত এই World Health Summit-এ সাধারণত চিকিৎসা বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক, জাতিসংঘের প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা অংশ নেন। সেখানে ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনের প্রতিনিধি হিসেবে কৃতি শ্যাননের অংশগ্রহণ ছিল নজিরবিহীন ঘটনা।
সম্মেলনে তিনি শুধুমাত্র অতিথি বক্তা হিসেবেই নয়, বরং নারী ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ভারতীয় সমাজে তাঁর নেতৃত্বের ভূমিকাও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে কৃতিকে “ইন্সপায়ারিং উইমেন লিডার” হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বলিউড—তারপর বিশ্বমঞ্চে
কৃতি শ্যাননের জীবনযাত্রা যেন নিজেই এক অনুপ্রেরণার গল্প। দিল্লির এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। পেশাগত জীবনের শুরুটা ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়ে হলেও, অভিনয়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ তাঁকে নিয়ে আসে চলচ্চিত্রে।
২০১৪ সালে Heropanti দিয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন কৃতি। এরপর Bareilly Ki Barfi, Mimi, Adipurushসহ একাধিক জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেন।
শুধু অভিনয় নয়, বর্তমানে তিনি প্রযোজনায়ও যুক্ত হয়েছেন এবং নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান Blue Butterfly Films-এর ব্যানারে কাজ করছেন।
তাঁর মতে,
“জীবনে সফলতা তখনই অর্থবহ হয়, যখন সেটা সমাজের জন্যও কিছু করে যেতে পারে।”
অভিনয়, ব্যবসা ও সমাজসেবা—সবখানেই কৃতি
অভিনয়ের পাশাপাশি কৃতি এখন সফল উদ্যোক্তাও। তিনি নিজস্ব স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড Hyphen চালু করেছেন, যা প্রাকৃতিক উপাদান ও স্বাস্থ্যকর ত্বকচর্চার ওপর গুরুত্ব দেয়। ব্র্যান্ডটির লাভের একটি অংশ তিনি নারী স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রকল্পে দান করেন।
তাছাড়া ভারতের গ্রামীণ অঞ্চলে মেয়েদের মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন সচেতনতা বাড়াতে তিনি কাজ করছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে।
এই উদ্যোগের কারণেই সম্ভবত তাঁকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে অতিথি বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
নতুন ছবির প্রস্তুতি—‘তেরে ইশক মে’
সমাজসেবার ব্যস্ততার পাশাপাশি কৃতি এখন মনোযোগ দিয়েছেন পরিচালক আনন্দ এল রাই-এর নতুন ছবি ‘তেরে ইশক মে’-এর শুটিংয়ে।
ছবিটিতে তাঁর বিপরীতে আছেন দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় তারকা ধানুশ।
রোমান্টিক ড্রামা ঘরানার এই সিনেমাটি ২০২৫ সালের ২৮ নভেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
সিনেমাটি নিয়ে কৃতি বলেন,
“এই ছবিতে ভালোবাসা, আত্মত্যাগ আর নারীর শক্তির গল্প রয়েছে। এটা শুধু সিনেমা নয়, আমার নিজের জীবনের দর্শনকেও তুলে ধরে।”
‘তারকা’ থেকে ‘মানবিক দূত’
অভিনয়ের বাইরেও সমাজে ইতিবাচক প্রভাব রাখার প্রচেষ্টার জন্য কৃতি শ্যানন এখন বলিউডের তরুণ প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক।
তিনি প্রমাণ করেছেন—তারকাখ্যাতি শুধু রেড কার্পেট বা আলো-ঝলমলে পর্দায় নয়, বরং সমাজে পরিবর্তনের বার্তা ছড়াতেও ব্যবহার করা যায়।
বার্লিনের বিশ্বমঞ্চে তাঁর দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারিত সেই আহ্বান যেন আজও প্রতিধ্বনিত হয়—
“নারীর স্বাস্থ্য রক্ষা করা মানে, আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ও আলোকিত ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়া।”
