চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকায় দুটি কারখানায় লাগা ভয়াবহ আগুন ছয় ঘণ্টা পার হলেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর না মিললেও, পুরো শিল্পাঞ্চল ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে এবং আশপাশের সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চল, বন্দর, কেইপিজেড ও আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের ১৫টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে সহায়তায় যোগ দিয়েছে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর দুটি প্লাটুন। রাত আটটা পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সুবাহান জানান, বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অ্যাডামস কারখানায় তোয়ালে ও ক্যাপ তৈরি হয়, আর জিহং মেডিকেল কোম্পানি তৈরি করে সার্জিকেল গাউন ও চিকিৎসা সামগ্রী। দুটি কারখানা একই আটতলা ভবনের ভেতরে অবস্থিত, এবং তাদের গুদাম রয়েছে ভবনের ছয় ও সাত তলায়।
ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, “ভবনের ভেতরে প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠিন হয়ে পড়েছে। ধোঁয়ার কারণে উদ্ধার অভিযানও ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, ভেতরে কোনো শ্রমিক আটকে নেই। ৬ ও ৭ তলা থেকে ধোঁয়ায় আটকে পড়া ২৫ জন শ্রমিককে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে, তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। “তদন্ত ছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বলা সম্ভব নয়,” বলেন জসিম উদ্দিন।
কারখানার প্রায় ৭০০ শ্রমিক নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ আহত হননি বলে জানা গেছে। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার সময় ভবনের ভেতরে প্রচণ্ড আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
জিহং মেডিকেল কোম্পানির শ্রমিক জোবেদা বেগম বলেন, “দুপুরে খাওয়ার পর হঠাৎ ‘আগুন, আগুন’ চিৎকার শুনে দৌড়ে নিচে নেমে আসি। ওপরতলায় আগুন দেখা যাচ্ছিল। আমাদের কারখানার যে জায়গা থেকে আগুন শুরু হয়, সেখানে নারী শ্রমিকদের প্রবেশের অনুমতি নেই।”
একই কারখানার সুপারভাইজার ফাহিমুল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, “যখন অ্যালার্ম বাজে, তখন আমি চারতলায় ছিলাম। সবাইকে নিয়ে নিচে নেমে আসি। আমাদের কারখানায় হাসপাতালে ব্যবহৃত গাউন, মাস্ক ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি তৈরি হতো। প্রচুর কাপড় ও প্যাকেটজাত দাহ্য উপকরণ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।”
ঘটনার পর থেকে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যরা আশপাশের এলাকায় ভিড় নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। স্থানীয়রা জানান, আগুন লাগার পর মুহূর্তেই ভবন থেকে কালো ধোঁয়ার বিশাল স্তম্ভ আকাশে উঠতে দেখা যায়। চারদিকের বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে ধোঁয়া ও জ্বলন্ত রাসায়নিকের তীব্র গন্ধ।
বিকেল চারটার পর ঘটনাস্থলে যোগ দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “চট্টগ্রাম ইপিজেডে বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য দুই প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।”
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ঘটনাস্থলে কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আশপাশের অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে আগুন ছড়িয়ে না পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনের তীব্রতা এত বেশি যে এখনো (রাত ৮টা পর্যন্ত) ধোঁয়া বের হচ্ছে এবং ভবনের ভেতরে প্রবেশ করা ঝুঁকিপূর্ণ।
এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে আমরা তদন্ত শুরু করব। কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ছিল কি না, তা-ও দেখা হবে।”
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভাতে অব্যাহতভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, এবং সিইপিজেড এলাকায় প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে।
