আলোর উৎসব দীপাবলি বা কালীপুজো মানেই আনন্দ, উৎসব আর মিলনের আবহ। কিন্তু এই আনন্দের মাঝেও অনেকে খুঁজে পান না শান্তি— বিশেষত যখন চারপাশ ভরে ওঠে শব্দবাজির দাপটে। সেই উদ্বেগের কথাই তুলে ধরলেন অভিনেত্রী অনিন্দিতা রায়চৌধুরী। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি বললেন, কালীপুজো এলে এখন আনন্দের চেয়ে ভয়ই বেশি লাগে তাঁর, বিশেষ করে বাড়ির ছোট সন্তান ও পোষ্য প্রাণীদের জন্য।
অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘কালীপুজো এলেই এখন খুব চিন্তায় থাকি। আমার বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে, বয়স্ক মানুষও আছেন, আর আছে পোষ্যও। শব্দবাজির তাণ্ডবের সময়ে ওদের কষ্ট দেখে সত্যিই মন খারাপ হয়ে যায়।’
ছবি দিয়ে মনের কথা
পোস্টে অনিন্দিতা শেয়ার করেছেন তাঁর একরত্তি কন্যা ও প্রিয় পোষ্যের একটি ছবি। বিছানায় মুখ গুঁজে শুয়ে দু’জন— দেখে মনে হয়, উৎসবের কোলাহলের মধ্যেও যেন এক টুকরো ভয়, একটুখানি অস্বস্তি। ক্যাপশনে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘অনেকে ভাবতে পারেন, আগে কি বাজি ফাটানো হতো না? নিশ্চয়ই হতো। ছোটবেলায় পাড়ার বড় দাদারা দোদোমা বানিয়ে ফাটাতে দেখেছি। চকোলেট বোমও দেখেছি। তবে তখনকার সময়টা ছিল অন্যরকম।’
‘আগে যেমন ছিল, এখন আর তেমন নেই’
অভিনেত্রীর মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের ভাবনা, সহানুভূতি আর সামাজিক বন্ধন। তাঁর কথায়, ‘তখনও মানুষ ভুল করত, দুষ্টুমি করত। কিন্তু তখন পাড়ার জেঠু বা কাকু সেই দামাল ছেলেটাকে ধমক দিতে পারতেন। স্কুলে বাচাল ছাত্রছাত্রীরা শাস্তি পেত। প্রতিবেশী অসুস্থ হলে বা কারও বাড়িতে বাচ্চা বা পোষা প্রাণী থাকলে, কেউ বাজি ফাটালে দাদারা তাকে বকতেন। এখন আর সেই সম্পর্কগুলো নেই।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, তখন মানুষের ভেতরে সহিষ্ণুতা, সহযোগিতা, সহানুভূতি আর মানবিকতা বেশি ছিল। এখন সবাই নিজের মধ্যে গুটিয়ে গেছে। উৎসব মানেই এখন অনেকের কাছে শুধু শব্দ, আলোক, আর সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট।’
শব্দের উৎসব নয়, আলোর উৎসব চায় মন
কালীপুজো মানেই আলোর উৎসব। কিন্তু সেই আলো অনেক সময় হারিয়ে যায় বাজির শব্দে, ধোঁয়ায় আর আতঙ্কে। অনিন্দিতা সেই বাস্তবতার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘দীপাবলি মানে তো আলো, কিন্তু এখন সেই আলোর সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে শব্দের অন্ধকার। এই শব্দে কষ্ট পায় শিশুরা, বৃদ্ধরা, প্রাণীরা। তবু কেউ কি ভাবে?’
তিনি খানিক ব্যঙ্গাত্মক সুরে আরও লিখেছেন, ‘আগে মানুষ ভুল করলে প্রতিবেশীরা ঠিক করত, এখন কেউ কিছু বলে না। সবাই নিজের ফোনে ব্যস্ত, নিজের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আটকে আছে। যেমন আমি এখন এই বড় বড় কথাগুলো লিখছি আমার আনলিমিটেড ইন্টারনেট দিয়ে।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসা ও বিতর্ক
অভিনেত্রীর পোস্টটি মুহূর্তে ভাইরাল হয়েছে। বহু মানুষ তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে মন্তব্য করেছেন— “এখনকার উৎসব যেন আতঙ্কের নামান্তর”, “প্রাণীর কষ্টটা কেউ বুঝতে চায় না”, “আলোয় নয়, শব্দে ডুবে গেছে পুজো।”
তবে কেউ কেউ বলেছেন, বাজি বন্ধ করে দিলে উৎসবের আনন্দ কমে যাবে। অনিন্দিতা অবশ্য সরাসরি কোনো নিষেধের পক্ষে নয়, তিনি চান ‘সচেতন আনন্দ’, যেখানে আনন্দ থাকবে, কিন্তু ক্ষতি নয়।
সময় বদলেছে, মানুষও বদলেছে
অনিন্দিতা রায়চৌধুরী স্পষ্ট বলেছেন, সময় বদলেছে— এবং সেই সঙ্গে বদলেছে আমাদের মূল্যবোধের ধরন। আগে ভুল হলেও সংশোধনের জায়গা ছিল, এখন সমালোচনার ভয়েই মানুষ মুখ খোলে না। তাঁর মন্তব্যে ফুটে উঠেছে এক গভীর সামাজিক বার্তা— উৎসব মানেই কেবল আনন্দ নয়, দায়িত্বও বটে।
তিনি লিখেছেন, ‘কালীপুজো হোক আলো আর ভালোবাসার উৎসব, আতঙ্কের নয়। শব্দ কমলে আনন্দ কমে না, বরং শান্তি বাড়ে।’
কালীপুজোর আগমনীতে এই বার্তা হয়তো অনেকের ভাবনায় নাড়া দেবে। কারণ শেষমেশ উৎসবের আসল মানেই তো — “আলোয় আলোকিত হওয়া, অন্ধকারে নয়।”
