বাংলাদেশে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত তথ্যে বিপুল পরিমাণ জাল নোটের প্রবাহের সম্ভাব্য খবরের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজ (বুধবার) একটি বিস্তৃত জনসচেতনতামূলক সতর্কবার্তা জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে নাগরিকদের নগদ লেনদেনের সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং জাল নোট শনাক্ত ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশিকা উপস্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নোট গ্রহণের সময় সাধারণ নাগরিককে অবশ্যই উক্ত নোটের সব নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যাচাই করতে হবে। উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে—ওয়াটারমার্ক, নিরাপত্তা সুতা, ইন্টাগ্লিও বা উঁচু প্রিন্টিং, রঙ পরিবর্তনশীল কালি (যেখানে প্রযোজ্য) এবং মাইক্রো টেক্সট। ব্যাংক মনে করিয়ে দিয়েছে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভালোভাবে না চিহ্নিত হলে নোট গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বলেছে, বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করাই উত্তম। যেখানে সম্ভব, নগদ লেনদেনের পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতি (মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, পেমেন্ট গেটওয়ে ইত্যাদি) ব্যবহার করার জন্য জনগণকে উৎসাহনীয় করা হয়েছে—এতে জাল নোটের ঝুঁকি প্রকৃতপক্ষে অনেকাংশে কমে যায়।
যদি কেউ সন্দেহভাজন নোট পেলে বা এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানতে পারলে দ্রুত নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, দেশের সব ব্যাংক শাখায় আসল নোটের বৈশিষ্ট্যসম্বলিত ব্যানার ও পোস্টার প্রদর্শন করা হচ্ছে—যাতে গ্রাহকরা সহজেই আসল ও জাল নোটের পার্থক্য বুঝে নিতে পারেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিবৃতিতে স্বীকার করেছে যে, গণমাধ্যেমে এমন ধরনের প্রতিবেদন জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই ব্যাংক সতর্কতামূলক এই প্রজ্ঞাপন জারি করে জনগণকে সত্যিকারের নোট চিনতে উৎসাহিত করছে এবং একই সঙ্গে আইনি কর্মবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিরও আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে জাল নোট তৈরি, সংরক্ষণ বা লেনদেন সম্পূর্ণ বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
নাগরিকদের জন্য দ্রুত চার ধাপের নির্দেশিকা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরামর্শগুলো দিয়েছে তা হলো—
- নোট গ্রহণের আগে অবশ্যই ওয়াটারমার্ক ও নিরাপত্তা সুতা যাচাই করুন।
- বড় অঙ্কের লেনদেনে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করুন।
- সন্দেহ হলে নোট গ্রহণ না করে নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় বা আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে জানান।
- যেখানে সম্ভব ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ ও প্রদানকে অগ্রাধিকার দিন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জাল নোটরোধে ও এর বিস্তার প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে। তারা একই সঙ্গে জনসাধারণকে ভ্রান্ত তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে এবং ব্যাংকের অফিসিয়াল সূত্র বা নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম থেকেই তথ্য যাচাই করে গ্রহণের পরামর্শও দিয়েছে।
বিকল্প হিসেবে, সহায়তাস্বরূপ আসল নোট শনাক্তের নির্দেশিকা ও বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে উপলব্ধ রয়েছে—যেখানে নাগরিকরা ধাপে ধাপে নোট যাচাইয়ের পদ্ধতি দেখতে পারবেন। স্থানীয় পত্রিকা, টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমেও বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশিকাগুলো দ্রুত ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যাতে প্রত্যেক গ্রাহক সচেতন হতে পারেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কবার্তার মূলে যেন একটাই লক্ষ্য—নাগরিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যেকোনও প্রকার জাল নোটের ক্ষতি থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করা। সাধারণ মানুষের সচেতনতা ও দায়বদ্ধতার মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ দমনের কার্যকর পথ পাওয়া সম্ভব বলে ব্যাংক মনে করেন।
