গত কয়েক মাস ধরে বলিউডে অন্যতম আলোচিত নাম দীপিকা পাড়ুকোন। একের পর এক সিনেমায় সাফল্যের পরও তাঁকে ঘিরে বিতর্কের শেষ নেই। সবকিছুর শুরু হয় নির্মাতা সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গার নতুন ছবি ‘স্পিরিট’–এ দীপিকার রেকর্ড পারিশ্রমিক ও প্রতিদিন সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা কাজের শর্তকে কেন্দ্র করে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ভারতীয় চলচ্চিত্র অঙ্গনে সৃষ্টি হয় উত্তাল প্রতিক্রিয়া।
ইন্ডাস্ট্রি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে—কেউ দীপিকার সিদ্ধান্তকে পেশাদারিত্বের নিদর্শন বলে আখ্যা দেন, আবার কেউ এটিকে অহংকার ও ‘তারকা মনোভাব’ বলে সমালোচনা করেন। নেটিজেনদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে কটূক্তি করতে ছাড়েননি। এতদিন চুপ থাকলেও অবশেষে নীরবতা ভেঙেছেন এই বলিউড সুপারস্টার।
সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম—আজকাল, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ একাধিক সূত্র জানায়, দীপিকা এবার সরাসরি সমালোচকদের উদ্দেশে তীর ছুড়েছেন। নির্মাতা সন্দীপ রেড্ডি বঙ্গার ‘স্পিরিট’ এবং বহুল আলোচিত ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’-এর সিকুয়াল থেকে তাঁর সরে যাওয়া নিয়ে যেসব জল্পনা তৈরি হয়েছিল, সেসব নিয়েই তিনি মুখ খুলেছেন এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে।
সাক্ষাৎকারে সরাসরি কোনো নাম না নিয়ে দীপিকা বলেন, “ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এখনো নারীদের প্রতি এক ধরনের ‘ডবল স্ট্যান্ডার্ড’ বা দ্বিমুখী মানসিকতা বিদ্যমান। একই কাজ একজন পুরুষ করলে সেটি ‘পেশাদারিত্ব’, আর একজন নারী করলে সেটি ‘দাম্ভিকতা’ হিসেবে দেখা হয়। এটা কেবল অন্যায় নয়, বরং অসম্মানজনকও।”
দীপিকার বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি কোনো বাড়তি সুবিধা দাবি করেননি, বরং পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট আট ঘণ্টা কাজ করার শর্ত দিয়েছেন। কিন্তু এই যুক্তিসঙ্গত চাওয়াই বিতর্কের জন্ম দেয়।
তিনি বলেন, “শুধু নারী হওয়ার কারণে যদি আমার এই শর্তকে অতিরিক্ত বা অবাস্তব বলা হয়, তাহলে তা-ই হোক। কিন্তু এ কথা সবার জানা, ভারতের বহু শীর্ষ পুরুষ অভিনেতা বছরের পর বছর ধরে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করছেন—এবং কেউ কখনো তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। তারা সোম থেকে শুক্র কাজ করেন, সপ্তাহান্তে বিশ্রাম নেন, কিন্তু সেটি নিয়ে কোনো খবর হয় না। অথচ আমি একই কাজ চাইলে সেটিই খবর হয়ে যায়!”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি এখন কোনো নাম নিতে চাই না, এতে বিষয়টি অন্যদিকে চলে যাবে। তবে আমার অনুরোধ, মানুষ আগে কারণটা জানুক, তারপর মন্তব্য করুক। আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না, কিন্তু এটা তো ভাবার বিষয়—একই কাজ দুইজন করলে একজনকে প্রশংসা আর অন্যজনকে তিরস্কার করা কতটা ন্যায্য?”
দীপিকার এই মন্তব্য বলিউডে চলমান লিঙ্গবৈষম্যের বাস্তবতা নতুন করে সামনে এনেছে। বহু নারী শিল্পী এর আগে ইন্ডাস্ট্রিতে অসম আচরণের কথা তুললেও এত স্পষ্ট ও সাহসী বক্তব্য খুব কমই এসেছে কোনো শীর্ষ তারকার মুখ থেকে।
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকদের মতে, দীপিকার অবস্থান শুধু নিজের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের নারী শিল্পীদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। তিনি এমন এক প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে বলিউডে উপেক্ষিত ছিল।
দীপিকার ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, কাজের সময়সীমা নির্ধারণ এবং শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়টি এখন তাঁর জন্য অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কাজের চাপ নিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের আলোচনা বেড়েছে—দীপিকার বক্তব্য সেই বিশ্বচর্চারই প্রতিফলন।
তবে তাঁর এই মন্তব্যের পর বলিউডে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, তিনি নারী শিল্পীদের জন্য পথ দেখাচ্ছেন; আবার অন্যরা মনে করছেন, একজন তারকার উচিত ‘ফ্লেক্সিবল’ থাকা। কিন্তু যাই হোক, দীপিকার কণ্ঠস্বর এবার আর উপেক্ষা করা কঠিন।
একই সঙ্গে তাঁর এই মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে, ঠিক কী কারণে তিনি ‘কল্কি ২৮৯৮ এডি’-এর সিকুয়াল থেকে বাদ পড়েছেন—অতিরিক্ত সময়ের চাপে নিজের সীমা টেনে দেওয়াই মূল কারণ।
শেষে দীপিকা বলেন, “আমি শুধু চাই, সবাই এক নিয়মে বিচার পাক। নারী কিংবা পুরুষ—কাজের জায়গায় আমরা সবাই পেশাদার, সেই মর্যাদাটুকু অন্তত দিন।
