ইসরাইলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। আজ শনিবার ভোর ৫টার দিকে তাঁকে বহনকারী বিমান হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
দীর্ঘ আটকের পর নিরাপদে দেশে ফেরা শহিদুল আলমকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান তাঁর স্ত্রী ও মানবাধিকার কর্মী রেহনুমা আহমেদ, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব, আলোকচিত্রী ও গবেষক মুনেম ওয়াসিফসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকেই।
শহিদুল আলম দৃক নামের স্বাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং নাগরিক অধিকার রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার একজন কণ্ঠ। গাজা অভিমুখী মানবিক সহায়তা বহরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গত বুধবার ইসরাইলি বাহিনীর হাতে আটক হন তিনি।
দৃকের ফেসবুক পেজে আজ সকালেই জানানো হয়, “বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসাই আমাকে ফিরে আসার সুযোগ করে দিয়েছে।” সেখানে আরও লেখা হয়, “মনে রাখতে হবে, গাজার মানুষ এখনো মুক্ত হয়নি। তাদের ওপর নির্যাতন চলছে। এই নির্যাতন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কাজও শেষ হবে না।”
দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শহিদুল আলম বলেন, “সারা পৃথিবী থেকে বাংলাদেশিরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, দোয়া করেছেন, আর বাংলাদেশ সরকার ও তুরস্কের সরকার যেভাবে সহযোগিতা করেছেন— আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।”
তিনি আরও বলেন, “আমি যেতে পেরেছি, কিন্তু অনেকেই পারেননি। আরও অনেকে যেতে চেয়েছেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। আমাদের মতো আরও হাজার ফ্লোটিলা দরকার— যতদিন না ফিলিস্তিন স্বাধীন হয়। আমাদের আসল সংগ্রাম এখনো বাকি।”
আন্তর্জাতিক সহায়তায় মুক্তি
ইসরাইলি বাহিনী শহিদুল আলমকে আটক করার পর তাঁকে কেৎজিয়েত কারাগারে নেওয়া হয়। তাঁর মুক্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জর্ডান, মিসর ও তুরস্কের মাধ্যমে সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। অবশেষে গতকাল শুক্রবার তিনি মুক্তি পান এবং টার্কিশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পৌঁছান।
ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো. মিজানুর রহমান। পরে তুরস্ক থেকে একই বিমান সংস্থার মাধ্যমে তিনি ঢাকায় ফেরেন।
শহিদুল আলমের মুক্তি ও দেশে ফেরার বিষয়ে তুরস্কের ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক কর্মকর্তাদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা’র মানবিক মিশন
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের নৃশংসতা বন্ধ এবং গাজায় অবরোধ ভাঙার প্রত্যয় নিয়ে ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’ নামের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম গাজা অভিমুখে মানবিক সহায়তা বহর পাঠায়।
এ যাত্রায় যুক্ত হয় আরেক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ‘থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’। দুই সংগঠনের নয়টি নৌযানে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মীরা যোগ দেন। সেই দলের অন্যতম ছিলেন শহিদুল আলম।
গাজার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রমের আগেই ইসরাইলি বাহিনী নৌবহরে হামলা চালায় এবং বেশ কয়েকজনকে আটক করে। শহিদুল আলমও ছিলেন সেই তালিকায়।
‘সংগ্রাম চলবেই’
দেশে ফেরার পর দৃকের ফেসবুক পেজে শহিদুল আলমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “গাজায় মানুষ আজও রক্তাক্ত। আমরা যারা ন্যায়বিচার, মানবতা ও স্বাধীনতার কথা বলি, তাদের দায়িত্ব এখানেই শেষ নয়। ফিলিস্তিন মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই।”
শহিদুল আলমের দেশে ফেরাকে বাংলাদেশের মানবাধিকার অঙ্গন ‘আন্তর্জাতিক সংহতির এক বিজয়’ হিসেবে দেখছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী গাজার মানবিক সংকটের প্রতি নতুন করে মনোযোগ এনে দেবে।
