বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল শনিবার ইতালির রাজধানী রোমের উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন। তিনি সেখানে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) আয়োজিত বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম (World Food Forum)–এর ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে অংশ নেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট শনিবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রোমের উদ্দেশে যাত্রা করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ফোরামের মূল অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন ইউনূস
সফরসূচি অনুযায়ী, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের মূল অধিবেশনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। তাঁর বক্তৃতায় থাকবে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য নিরসন, সামাজিক ব্যবসা এবং টেকসই উন্নয়নের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত।
প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান, গবেষক ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিসহ বেশ কয়েকজন বৈশ্বিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। এসব বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য সংকট মোকাবিলা, কৃষিতে উদ্ভাবন ও দারিদ্র্য বিমোচনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে কথা হবে।
খাদ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বজুড়ে মতবিনিময়
ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম মূলত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর উদ্যোগে আয়োজিত একটি বৈশ্বিক সম্মেলন, যেখানে বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারক, বিজ্ঞানী, তরুণ উদ্যোক্তা ও উন্নয়নকর্মীরা একত্রিত হয়ে খাদ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ রূপরেখা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
এই বছরের ফোরামের মূল প্রতিপাদ্য—
“Hand in Hand for Better Food and a Better Future”
অর্থাৎ “উন্নত খাদ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সবার জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া।”
রোমে অবস্থিত FAO সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই ইভেন্ট চলবে ১০ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত। সপ্তাহব্যাপী আয়োজনটিতে থাকবে নীতি সংলাপ, গবেষণা উপস্থাপনা, প্রদর্শনী ও নেটওয়ার্কিং সেশন। এখানে খাদ্য উৎপাদনের উদ্ভাবন, ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব অর্জন এবং জলবায়ু-সহনশীল কৃষি কৌশল নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে।
বাংলাদেশের সক্রিয় কূটনীতির প্রতিফলন
প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সক্রিয়তার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বৈশ্বিক নীতিনির্ধারণে বাংলাদেশ এখন শুধু অনুসারী নয়, বরং অংশগ্রহণকারী ও নেতৃত্বদায়ী ভূমিকা পালন করছে।
অধ্যাপক ইউনূসের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের কৃষি, খাদ্যনীতি ও উদ্ভাবনভিত্তিক অর্থনীতির ভাবমূর্তি আরও সুদৃঢ় করবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা—বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংক ও সামাজিক ব্যবসার মডেল—দারিদ্র্য বিমোচনে আন্তর্জাতিকভাবে ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রোম সফরের তাৎপর্য
বিশ্বব্যাপী চলমান খাদ্য সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তন ও বাজারব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ—এসব ইস্যুর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের ফোরাম। এ প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক ইউনূসের উপস্থিতি কেবল আনুষ্ঠানিক নয়, বরং একটি নীতিগত সংলাপে বাংলাদেশের কণ্ঠকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরার সুযোগ তৈরি করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, টেকসই কৃষি, বিকল্প জ্বালানি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক হবে।
দেশে ফেরার সম্ভাব্য তারিখ
সফরসূচি অনুযায়ী, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১৫ অক্টোবর দেশে ফিরবেন। তাঁর সফরের ফলাফল ও বৈঠকের সারসংক্ষেপ সে সময় গণমাধ্যমে জানানো হবে।
বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, এই সফর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক মঞ্চে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।
