আবু ধাবির জাহেদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হতাশাজনক সূচনা হলো বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজের। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে আফগানিস্তানের কাছে ৫ উইকেটে হেরে পেছনে পড়ল টাইগাররা। ফলে সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল আফগানিস্তান, যারা টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল।
টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। কিন্তু সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত ব্যুমেরাং হয়ে দাঁড়ায় ব্যাটারদের ব্যর্থতায়। আফগানিস্তানের পেস–স্পিনের মিশ্র আক্রমণে ৪৮.৫ ওভারে ২২১ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ দল।
শুরুর ধাক্কায় ব্যাকফুটে টাইগাররা
ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই আসে প্রথম আঘাত। আজমতুল্লাহ ওমারজাইয়ের গতিময় ডেলিভারিতে ১০ রান করে আউট হন ওপেনার তানজিদ হাসান। কিছুক্ষণ পরেই ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত—ওমারজাইয়ের দ্বিতীয় শিকার তিনি, করেন মাত্র ২ রান।
প্রথম দশ ওভারেই ২৫ রানে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দল। সেই চাপ সামলাতে মাঠে নামেন তাওহিদ হৃদয় ও সাইফ হাসান। দুজন কিছুটা স্থিরতা আনলেও ২৮ রানের জুটি ভাঙেন আফগান স্পিনার নাঙ্গোলিয়া খারোতি। অভিষেক ম্যাচে ব্যাট করতে নামা সাইফ করেন ৫ চারে ২৬ রান।
হৃদয়–মিরাজে প্রতিরোধ, এরপর পতনের ধারা
৫৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দায়িত্ব নেন তাওহিদ হৃদয় ও অধিনায়ক মিরাজ। ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যান দলকে। ২৬তম ওভারে রান পৌঁছে যায় ১০০ তে, আর ৩৫তম ওভারের মধ্যে উভয়েই অর্ধশতকের দেখা পান।
হৃদয় ছক্কা মেরে ৭৫ বলে ব্যক্তিগত হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন—এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম। মিরাজও ৭৪ বলে অর্ধশতক তুলে নেন, যা তার সপ্তম।
তবে দলের রান ১৫৪ তে পৌঁছাতেই ভাঙে বড় জুটি। রান আউটের ফাঁদে পড়ে ৫৬ রান করে ফেরেন হৃদয়। তাদের ১৪২ বলে ১০১ রানের জুটি ছিল ইনিংসের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়।
এরপর আফগান স্পিন জুটির ঘূর্ণিতে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের বাকি ব্যাটিং লাইনআপ। রশিদ খান ও গাজানফারের ঘূর্ণি সামলাতে না পেরে শেষ ৬ উইকেট হারায় মাত্র ৪৬ রানে। শেষ পর্যন্ত ২২১ রানে থামে ইনিংস।
সবচেয়ে বেশি রান করেন মিরাজ—৮৭ বলে ৬০, একটি চার ও একটি ছক্কা। এছাড়া তানজিম হাসান সাকিব ১৭, তানভীর ইসলাম ১১ ও জাকের আলি ১০ রান যোগ করেন।
আফগানিস্তানের হয়ে ওমারজাই ও রশিদ নেন ৩টি করে উইকেট, গাজানফার পান ২টি। এই ইনিংসেই রশিদ খান ওয়ানডেতে ২০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন।
গুরবাজ–রহমতের জুটিতে আফগানদের সহজ জয়
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ সূচনা পায় আফগানিস্তান। দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান গড়েন ৫৭ রানের জুটি। দশম ওভারে তানভীর ইসলামের স্পিনে ভাঙে ওপেনিং জুটি—জাদরান ফেরেন ২৩ রানে।
তবে গুরবাজের সঙ্গে ক্রিজে আসেন রহমত শাহ, এবং দুজন মিলে তৃতীয় উইকেটে ১১১ বলে ৭৮ রান যোগ করেন। গুরবাজ করেন ৭৬ বলে ৫০, রহমত ৭০ বলে ৫০ রান। দুজনকেই আউট করেন বাংলাদেশের তরুণ পেসার তানজিম হাসান ও মিরাজ।
১৩৬ রানে চার উইকেট হারানোর পর আফগানিস্তান কিছুটা চাপে পড়লেও সেটি কাটিয়ে ওঠেন ওমারজাই ও অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি। পঞ্চম উইকেটে তারা যোগ করেন ৫৯ রান। জয়ের মাত্র ২৭ রান দূরে থাকতে তানজিমের বলে আউট হন ওমারজাই—৪৪ বলে ৪০ রান, ৬ চার ও ১ ছক্কা।
শেষ পর্যন্ত ২৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৩১ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ শেষ করেন শাহিদি (৩৩*) ও অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি (১১*)।
বাংলাদেশের হয়ে তানজিম নেন ৩১ রানে ৩ উইকেট, তানভীর ও মিরাজ নেন ১টি করে। ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন আফগানিস্তানের ওমারজাই।
আগামী ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা
সিরিজে টিকে থাকতে হলে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের কোনো বিকল্প নেই বাংলাদেশের সামনে। সিরিজের পরবর্তী ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১১ অক্টোবর, একই ভেন্যুতে—আবু ধাবির জাহেদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যাটিং লাইনআপে কিছু পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত শীর্ষ ক্রমে আরও আক্রমণাত্মক কৌশল গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন কোচ হাথুরুসিংহে।
বাংলাদেশ দল এখন তাকিয়ে থাকবে সেই ম্যাচের দিকে—যেখানে হার মানেই সিরিজ হার, আর জয় মানে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ – ২২১/১০ (৪৮.৫ ওভারে); মিরাজ ৬০, হৃদয় ৫৬; রশিদ ৩/৩৮।
আফগানিস্তান – ২২৬/৫ (৪৭.১ ওভারে); গুরবাজ ৫০, রহমত ৫০; তানজিম ৩/৩১।
ফলাফল: আফগানিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।
পরবর্তী ম্যাচ: ১১ অক্টোবর, জাহেদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আবু ধাবি।
