সারাদেশজুড়ে আকাশ মেঘলা থেকে আংশিক মেঘলা থাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু’একটি জায়গায়ও অনুরূপ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণও হতে পারে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
তাপমাত্রা থাকবে প্রায় অপরিবর্তিত
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ, বর্তমানে যে উষ্ণতা বিরাজ করছে, তা আগামী একদিন প্রায় একই থাকবে। তবে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম অনুভূতি কিছুটা বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে রাজধানী ও দক্ষিণাঞ্চলে।
বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ফেনী ও রাজশাহীতে, উভয় জায়গায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা মৌসুমের তুলনায় স্বাভাবিক।
বৃষ্টিপাতে এগিয়ে চাঁদপুর
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়েছে চাঁদপুরে, সেখানে রেকর্ড করা হয়েছে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি। এই বর্ষণ স্থানীয় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করলেও, কৃষকেরা এর সুফল পাচ্ছেন—বিশেষত ধান ও সবজির ক্ষেতের জন্য এটি অনুকূল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঢাকায় বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা রেকর্ড করা হয়েছে ৯৭ শতাংশ, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে উচ্চমাত্রার আর্দ্র আবহাওয়ার। রাজধানীতে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। এতে তাপমাত্রা খুব একটা না কমলেও দমকা হাওয়ার কারণে বিকেল ও সন্ধ্যায় কিছুটা শীতল অনুভূতি পাওয়া যেতে পারে।
মৌসুমী বায়ুর অবস্থান ও প্রভাব
আবহাওয়া অফিস জানায়, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ বর্তমানে ভারতের পূর্ব উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এই মৌসুমী বায়ু বর্তমানে বাংলাদেশের ওপর তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে আকাশে মেঘ জমলেও ভারী বৃষ্টির প্রবণতা কম, তবে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, অক্টোবর মাস সাধারণত মৌসুমের পরিবর্তনের সময়। এই সময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ধীরে ধীরে বিদায় নেয় এবং উত্তর দিক থেকে হালকা শুষ্ক বাতাস প্রবাহ শুরু হয়। ফলে বৃষ্টিপাতের ধারা কিছুটা অনিয়মিত হলেও বজ্রবৃষ্টি ও হালকা দমকা হাওয়ার ঘটনা দেখা যায়।
রাজধানীর আবহাওয়া ও সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সময়
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ৩৮ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ৫৪ মিনিটে। দিন ছোট হচ্ছে, যা শরৎ থেকে হেমন্তে রূপান্তরের একটি প্রাকৃতিক লক্ষণ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
রাজধানীতে সকাল থেকে আকাশ মেঘলা থাকলেও দুপুরের পর কিছুটা রোদ দেখা যেতে পারে। তবে বিকেল থেকে রাতের দিকে আবারও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
সতর্কতা ও পরামর্শ
আবহাওয়া অধিদপ্তর পরামর্শ দিয়েছে—বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠ, নদী বা জলাশয়ের ধারে অবস্থান না করতে। পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় কৃষিকাজের সময় বা মোবাইল ফোন ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে যে আবহাওয়ার ধারা চলছে তা মৌসুমের শেষ প্রান্তের জন্য স্বাভাবিক। তবে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে আবহাওয়ায় হালকা শীতের ইঙ্গিত দেখা দিতে পারে, বিশেষত উত্তরাঞ্চলে।
