বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর প্রতি নিজস্ব আচরণবিধি (Code of Conduct) প্রণয়ন ও তা জনসম্মুখে প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, “গণমাধ্যম জনগণের চোখ, কান ও কণ্ঠস্বর। তাই তাদের নিজস্ব আচরণবিধি থাকা জরুরি, যা অনুসরণ করলে দর্শকও বুঝতে পারবেন—চ্যানেলগুলো কতটা নৈতিক ও দায়বদ্ধ সাংবাদিকতা করছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যখন একটি চ্যানেল তার আচরণবিধি জনসম্মুখে প্রকাশ করবে, তখন দর্শক-শ্রোতারা সেটির মান যাচাই করতে পারবেন। এতে গণমাধ্যমের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি আরও শক্তিশালী হবে।”
কেবল টিভি ডিজিটালাইজেশন নিয়ে নীতিমালা আসছে
মতবিনিময় সভায় তথ্য উপদেষ্টা জানান, দেশে কেবল টিভি ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ ইতোমধ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সম্প্রচার খাতে স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন ঘটবে। আমরা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং খুব শিগগিরই আবারও সভা করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।”
তিনি জানান, ডিজিটাল কেবল সিস্টেম চালু হলে দর্শকরা আরও উন্নতমানের সম্প্রচার পাবেন, একইসঙ্গে চ্যানেলগুলোর জন্য বিজ্ঞাপন, রেটিং ও সাবস্ক্রিপশন ব্যবস্থাও হবে সুশৃঙ্খল।
টিআরপি নিয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত
মাহফুজ আলম বলেন, “টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট (টিআরপি) নিয়ে ইতিমধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)-এর সঙ্গে আলোচনায় বসা হয়েছে। আমরা চাই, একটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য টিআরপি ব্যবস্থা গড়ে উঠুক, যাতে বিজ্ঞাপন বাজার ও গণমাধ্যম উভয়ের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই বিষয়ে সরকার দ্রুত একটি কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে।
অ্যাটকোর প্রস্তাব ও মন্তব্য
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত অ্যাটকোর নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের টেলিভিশন শিল্প এখন প্রযুক্তিগত রূপান্তরের গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায়ে রয়েছে। তারা কেবল টিভিকে ডিজিটালে রূপান্তরের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
একইসঙ্গে তারা অনুরোধ জানান, বেসরকারি টিভি চ্যানেলের জন্য যদি কোনো নতুন আইন বা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়, তবে অংশীজনদের মতামত অবশ্যই নেওয়া উচিত। এতে বাস্তবসম্মত ও অংশগ্রহণমূলক নীতিনির্ধারণ সম্ভব হবে বলে তারা মত দেন।
অ্যাটকোর প্রতিনিধিরা আরও জানান, বর্তমানে সরকার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ওপর কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ বা চাপ প্রয়োগ করছে না। তারা সরকারের সহযোগিতায় গণমাধ্যম খাতকে আরও পেশাদার ও দায়িত্বশীল করে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
উপস্থিতি ও অন্যান্য কার্যক্রম
সভায় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, অ্যাটকোর কোষাধ্যক্ষ জহির উদ্দীন মাহমুদ মামুন, পরিচালক মোস্তফা কামাল, পরিচালক আব্দুস সালাম, পরিচালক নাভিদুল হক ও পরিচালক টিপু আলম মিলন।
মতবিনিময় সভার আগে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মন্ত্রণালয়ের চলমান কার্যক্রম, কেবল ডিজিটালাইজেশন, টিআরপি সংস্কার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তিনি বলেন, “সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাদারিত্বে বিশ্বাস করে। তবে স্বাধীনতার সঙ্গে দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতা বজায় রাখাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
সভা শেষে অ্যাটকো প্রতিনিধিরা উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সরকারের এমন অংশগ্রহণমূলক পদক্ষেপ গণমাধ্যম ও সরকারের মধ্যে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
