ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মঙ্গলবার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, বিজেপির নেতা–কর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতেই আগরতলায় তৃণমূলের দলীয় দপ্তরে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
তাঁর দাবি, বাংলায় একের পর এক নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বিজেপি এ ধরনের “প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি” করছে। এই হামলার নেপথ্যে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, সে কথাও ইঙ্গিত দিয়েছেন অভিষেক।
হামলার ভিডিও প্রকাশ করে ক্ষোভ অভিষেকের
মঙ্গলবার বিকেলে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে দেখা যায়, আগরতলার তৃণমূল দপ্তরে হামলার সময় দলীয় প্রতীক ‘জোড়াফুলে’ বারবার লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে এবং অফিসে ভাঙচুর চালানো হচ্ছে।
অভিষেক লিখেছেন,
“বাংলার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে বিজেপি আজ গণতন্ত্রের মুখোশ পরে গুন্ডামিতে নেমেছে। পুলিশের চোখের সামনে আমাদের অফিসে হামলা চালানো হচ্ছে—এটাই ওদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।”
তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। ২০২১ সালে আমার কনভয়ের ওপরও ত্রিপুরায় হামলা হয়েছিল। তখনও বিজেপির কর্মীরাই জড়িত ছিল। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু কাজ করে একনায়কতান্ত্রিকভাবে।”
পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল পাঠানোর নির্দেশ
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার পরপরই তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটি পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল গঠনের নির্দেশ দেন, যারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবে।
এই দলে থাকছেন—
- তৃণমূলের সাংসদ সায়নী ঘোষ ও প্রতিমা মণ্ডল,
- পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা,
- ছাত্রনেতা সুদীপ রাহা প্রমুখ।
তাঁরা বুধবার সকালেই আগরতলার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা জানিয়েছেন তৃণমূল সূত্র। প্রতিনিধি দলটি হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাবে।
নাগরাকাটার ঘটনার ছায়া ত্রিপুরায়
ত্রিপুরার এই রাজনৈতিক উত্তেজনার পেছনে রয়েছে উত্তরবঙ্গের নাগরাকাটা ঘটনার প্রতিক্রিয়া। সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বিতিকে কেন্দ্র করে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর চক্রবর্তীর উপর হামলার অভিযোগ ওঠে।
এই ঘটনাকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড় রাজনীতি—বিজেপি অভিযোগ তোলে, হামলার পেছনে তৃণমূলের হাত রয়েছে।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হাসপাতালে গিয়ে খগেন মুর্মুকে দেখে আসেন এবং সাংবাদিকদের বলেন,
“আমরা কোনও ধরনের হিংসাকে সমর্থন করি না। বামুনডাঙার ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনো যোগ নেই।”
তবে তৃণমূলের মতে, বিজেপি সেই ঘটনাকে হাতিয়ার করে ত্রিপুরায় রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিচ্ছে।
“আইন হাতে তুলে নিয়েছে বিজেপি কর্মীরা”
অভিষেকের অভিযোগ, আগরতলার ঘটনায় বিজেপি পরিকল্পিতভাবে আইন হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন,
“ত্রিপুরার পুলিশের সামনেই গেরুয়া পতাকা হাতে নিয়ে তৃণমূলের দপ্তরে হামলা চালানো হয়েছে। এটি বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি এবং গণতন্ত্রবিরোধী মানসিকতার প্রকাশ।”
তৃণমূলের বক্তব্য, বিজেপি শাসিত রাজ্যে বিরোধী কণ্ঠ দমন ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের রাজনীতি চালানো হচ্ছে, যাতে দলীয় সংগঠন কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ে।
বিজেপির পাল্টা অভিযোগ
ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বিজেপির এক মুখপাত্র বলেন,
“পশ্চিমবঙ্গে আমাদের সাংসদ ও বিধায়কদের রক্তাক্ত করা হয়েছে, অথচ তার দায় তৃণমূল এড়িয়ে যাচ্ছে। আগরতলার ঘটনায় বিজেপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
তাঁর দাবি, তৃণমূলের অভিযোগ আসলে রাজনৈতিক নাটক, যা বাংলার ব্যর্থতা আড়াল করতে তোলা হয়েছে।
“গণতন্ত্র ও জনগণের রায় জয়লাভ করবে”
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বার্তায় স্পষ্ট ভাষায় বলেন,
“বিজেপির নিষ্ঠুর রাজনীতির বিরুদ্ধে গণতন্ত্র, আইন ও জনগণের রায় সব সময় জয়লাভ করবে।”
তৃণমূলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো, ত্রিপুরায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ সংকুচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক সহনশীলতার পরিবর্তে ভয়ভীতি ও দমননীতি আরও প্রকট আকার ধারণ করছে।
আগরতলার এই হামলার অভিযোগ নতুন করে বিজেপি-তৃণমূল দ্বন্দ্বকে জাতীয় আলোচনায় টেনে এনেছে। একদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদ ও প্রতিনিধি দল পাঠানোর ঘোষণা, অন্যদিকে বিজেপির পাল্টা যুক্তি—দুই রাজ্যেই রাজনৈতিক পারদ চড়াচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, ত্রিপুরা প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয় এবং তদন্তের মাধ্যমে এই হামলার সত্যতা কতটা উন্মোচিত হয়।

সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited