ভারতের গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত হেরে গেল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭৮ রানের সংগ্রহ গড়ে লড়াকু পারফরম্যান্স দেখালেও, জয় থেকে মাত্র কয়েক ধাপ দূরে গিয়ে থেমে যায় টাইগ্রেসদের স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে জিতে মাঠ ছাড়ে ইংল্যান্ড।
প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ আজ জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে টুর্নামেন্টে আরও এগিয়ে যেত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ইংল্যান্ড অধিনায়ক হেদার নাইট ও চার্লি ডিনের অবিচ্ছিন্ন জুটিই বদলে দেয় ম্যাচের রূপরেখা।
ব্যাটিংয়ে সোবাহানা ও রাবেয়ার লড়াকু ইনিংস
টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও শারমিন আকতারের ব্যাটে ২৯ বলে ২৪ রানের সূচনা আসে। কিন্তু রুবাইয়া ৯ বলে ৪ রান করে দ্রুত বিদায় নিলে চাপে পড়ে দল। এরপর অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি খালি হাতে সাজঘরে ফিরলে আরও বিপাকে পড়ে টাইগ্রেসরা।
এক প্রান্তে দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাট চালিয়ে যান শারমিন, কিন্তু তিনিও ৫২ বলে ৩০ রান করে আউট হন দলীয় ৫৯ রানে। এরপর একে একে ফিরেছেন স্বর্ণা আকতার (১০), রিতু মনি (৫), ফাহিমা খাতুন (৭) ও নাহিদা আকতার (১)।
দল যখন ধুঁকছে, তখন একাই দাঁড়িয়ে লড়লেন সোবাহানা মোস্তারি। চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে নামা এই ডান-হাতি ব্যাটার ৯২ বল খেলে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৮টি চারে ১০৮ বলে ৬০ রানের অনন্য ইনিংস খেলে আউট হন সোবাহানা।
শেষ দিকে ঝড় তোলেন রাবেয়া খাতুন। নয় নম্বরে নেমে ২৭ বলে অপরাজিত ৪৩ রান করেন তিনি, যাতে ছিল ৬টি চার ও ১টি ছক্কা। তার মারমুখী ইনিংসের সৌজন্যে ৪৯.৪ ওভারে ১৭৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের পক্ষে সোপিয়া একলেস্টোন ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার—২৪ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি।
বল হাতে দারুণ সূচনা বাংলাদেশের
১৭৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন তরুণ পেসার মারুফা আকতার। ইনসুইং ডেলিভারিতে ইংল্যান্ড ওপেনার অ্যামি জোন্সকে ১ রানে লেগ বিফোর আউট করেন তিনি।
নিজের চতুর্থ ওভারে মারুফা ফের আঘাত হানেন—১৩ রানে আউট করেন ট্যামি বিউমন্টকে। স্কোরবোর্ডে তখন ইংল্যান্ডের সংগ্রহ মাত্র ২৯/২।
পরিস্থিতি সামলাতে এগিয়ে আসেন অধিনায়ক ন্যাট সিভার-ব্রান্ট ও হেদার নাইট। ৪০ রানের জুটি গড়ে কিছুটা স্থিতি আনেন তারা, কিন্তু ১৯তম ওভারে নাটকীয় ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
ফাহিমার স্পিনে হেলে পড়ে ইংল্যান্ড
লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুন দুর্দান্ত এক ওভারেই ব্রান্ট (৩২) ও ডাঙ্কলি (০)-কে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচে ফেরান বাংলাদেশকে। কিছুক্ষণ পরই তিনি আউট করেন এমা ল্যাম্বকে (১), ইংল্যান্ড তখন ৭৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে।
অন্য প্রান্ত থেকে সানজিদা আকতার মেঘলাও আঘাত হানেন। তার ঘূর্ণিতে এলিস ক্যাপসি (২০) বিদায় নিলে ১০৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। তখন জয় থেকে মাত্র ৭৬ রান দূরে ইংলিশরা, আর বাংলাদেশের দরকার ছিল ৪ উইকেট।
শেষ জুটিতে ভেসে গেল টাইগ্রেসদের আশা
এরপর বাংলাদেশের সব পরিকল্পনা ভেসে যায় নাইট ও চার্লি ডিনের ৭৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে। ১০০ বলে এই জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
হেদার নাইট ৮টি চার ও ১টি ছক্কায় ১১১ বলে ৭৯ রানে অপরাজিত থাকেন, আর ডিন করেন ২৭ রান।
বাংলাদেশের হয়ে ফাহিমা খাতুন ছিলেন সবচেয়ে সফল বোলার—১০ ওভারে ১৬ রানে ৩ উইকেট। মারুফা আকতার নেন ২ উইকেট, আর সানজিদা মেঘলা নেন ১টি।
পরবর্তী ম্যাচ
বাংলাদেশ নারী দল আগামী ১০ অক্টোবর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে। গৌহাটিতেই অনুষ্ঠিতব্য ওই ম্যাচে জয় পেলে টাইগ্রেসদের সেমিফাইনালের আশা টিকে থাকবে।
পরিসংখ্যান বলবে—বাংলাদেশ হেরেছে। কিন্তু মাঠের লড়াই বলছে অন্য কথা। সোবাহানার দৃঢ়তা, ফাহিমার স্পিন ম্যাজিক, রাবেয়ার আগ্রাসী ব্যাটিং—সব মিলিয়ে প্রমাণ হয়েছে, এই দল এখন শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, জয়ের দাবিদারও হতে জানে।
