টাইফয়েডে শিশু মৃত্যুকে ‘অগ্রহণযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য’ উল্লেখ করে রোগটির টিকা শতভাগ নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। তিনি বলেন, “ডায়রিয়া, রাতকানা, হামের মতো বহু রোগ আমরা টিকাদানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। অথচ এখনও টাইফয়েডে শিশু মারা যায় বা অঙ্গহানি হয়—এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। এখন সময় এসেছে, প্রতিটি শিশুকে এই টিকার আওতায় আনার।”
আজ (সোমবার) রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫’ এর জাতীয় অ্যাডভোকেসি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে টিকাদান শুরু
নূর জাহান বেগম জানান, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হবে জাতীয় টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন। এই কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী যেকোনো শিশু এই টিকা গ্রহণ করতে পারবে।
তিনি বলেন, “এই টিকাদান কার্যক্রম আমাদের আরেকটি বড় সাফল্যের সূচনা হতে পারে। ইপিআই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সাফল্যের নজির স্থাপন করেছে। আশা করি, টাইফয়েড টিকাদানেও আমরা সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখব।”
‘প্রত্যেক শিশুকে টিকা নিশ্চিত করুন’
প্রচার-প্রচারণা জোরদারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমরা অনেক ঘরে পৌঁছাতে পারিনি। আমার ঘরেও কেউ টাইফয়েড টিকার কথা বলেনি। এর মানে আমাদের প্রচার যথেষ্ট নয়। ঘরে ঘরে বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। জন্ম সনদ থাকুক বা না থাকুক, কোনো শিশু যেন বাদ না যায়—এটাই আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু টিকা দেওয়া নয়, শতভাগ শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এজন্য সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। ভুল ধারণা দূর করতে হবে। গণমাধ্যমকেও এই প্রচারণায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।”
‘স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে সফল কর্মসূচি টিকাদান’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে সফল কর্মসূচি আমাদের টিকাদান কর্মসূচি। আমরা ডিপথেরিয়া, হামের মতো মারণব্যাধি প্রায় নির্মূল করেছি। এখন টাইফয়েডও সেই তালিকায় যোগ হবে।”
তিনি জানান, ভবিষ্যতে টাইফয়েড টিকাকে রেগুলার ইপিআই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। “জনবল বাড়ানোর জন্য মেডিকেল ও নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী এবং ইন্টার্নদের সংযুক্ত করা যেতে পারে,” যোগ করেন তিনি।
‘প্রস্তুত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো’
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, “টাইফয়েড টিকা আমাদের জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও টিকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, অতিরিক্ত সচিব এ টি এম সাইফুল ইসলাম, এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক দাউদ মিয়া, ইউনিসেফের দীপিকা শর্মা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ডেপুটি রিপ্রেজেনটেটিভ রাজেশ নরওয়ানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও বিদেশি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গাভি ও ইউনিসেফের সহায়তায় ৫ কোটি শিশুর জন্য টিকা
টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের পুরো প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (গাভি) এবং ইউনিসেফ। ইতোমধ্যে প্রায় দুই কোটি শিশুর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিবন্ধন ছাড়াও কোনো শিশু এলে টিকা দেওয়া হবে। নিবন্ধন থাকলে ব্যবস্থাপনা সহজ হয়, তাই অভিভাবকদের নিবন্ধনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
‘আমাদের সন্তানদের রক্ষা করাই লক্ষ্য’
শেষে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম বলেন, “এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা টাইফয়েডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করলাম। দেরিতে হলেও আমরা সঠিক পথে হাঁটছি। যদি সবাই সহযোগিতা করে, তবে একদিন আমরা গর্ব করে বলতে পারব—টাইফয়েড আমাদের সন্তানদের জীবনে আর ফিরে আসেনি।”










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited