বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সামনে নতুন এক চ্যালেঞ্জ। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পর এবার ওয়ানডে সিরিজে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মাঠে নামছে টাইগাররা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল (মঙ্গলবার) আবু ধাবির জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ম্যাচটি। সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস ও নাগরিক টিভি।
টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করেছিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচেই রান তাড়া করে দারুণ জয় তুলে নেয় মেহেদি হাসান মিরাজের দল। প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট, দ্বিতীয়টিতে ২ উইকেট এবং শেষ ম্যাচে ৬ উইকেটের জয়—প্রতিটি ম্যাচেই দলের মানসিক দৃঢ়তা ও ব্যাটিং গভীরতা স্পষ্ট ছিল।
এশিয়া কাপে ব্যর্থতা ও সাম্প্রতিক ওয়ানডে পারফরম্যান্সের চাপ নিয়েই আফগানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি লড়াইয়ে নেমেছিল টাইগাররা। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে সব সমালোচনার জবাব দিয়েছে তরুণদের পারফরম্যান্স। সেই জয়ের ধারা এবার ওয়ানডেতে ধরে রাখতে মরিয়া মিরাজবাহিনী।
বাংলাদেশ দল ইতিমধ্যে আবু ধাবিতে তিনদিনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। কন্ডিশন অনুকূল, তবে দুপুরের গরমে বোলারদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে উইকেটের স্বাভাবিকতা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাটিং অর্ডারে সামান্য পরিবর্তন আনতে পারে; ইনফর্ম তাওহিদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর ওপর বড় দায়িত্ব থাকবে রান বোর্ডে তোলার।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে এগিয়ে বাংলাদেশ
ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সামগ্রিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশের পক্ষেই। দুই দল এখন পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে ১৯ বার। এর মধ্যে ১১ ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, আর ৮টিতে জয় আফগানদের। তবে শেষ ওয়ানডে সিরিজের স্মৃতি সুখকর নয় মিরাজদের জন্য।
২০২৪ সালের নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতেই তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল আফগানিস্তান। সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ এবার সামনে পাচ্ছে বাংলাদেশ।
সাম্প্রতিক ওয়ানডে ফর্মে ভরসা খুঁজছে টাইগাররা
ওয়ানডে ফরম্যাটে সাম্প্রতিক ফলাফল আশানুরূপ নয় বাংলাদেশের। আফগানদের বিপক্ষে হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ ও শ্রীলংকা সফরে ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয় দলটি। এরপর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় মিরাজবাহিনী।
তবে নতুন করে গড়া এই দলের প্রাণশক্তি এখন তরুণদের মধ্যে। নতুন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের নেতৃত্বে দল পেয়েছে উচ্ছ্বাস, ইতিবাচকতা ও আক্রমণাত্মক মানসিকতা।
বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণে ভরসা রিশাদ হোসেন ও তানভির ইসলাম। তাদের সঙ্গে গতি আক্রমণে থাকবেন তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান ও হাসান মাহমুদ। ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে তানজিদ হাসান ও মোহাম্মদ নাঈমকে। মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয় ও শান্তর পাশাপাশি আছেন নুরুল হাসান ও জাকের আলি।
আফগানিস্তানও চায় ঘুরে দাঁড়াতে
টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশের পর আফগানিস্তান এখন মরিয়া নিজেদের সুনাম ফিরে পেতে। অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শাহিদীর নেতৃত্বে ওয়ানডে দলে আছে অভিজ্ঞতা ও ভারসাম্য—রহমত শাহ, গুরবাজ, রশিদ খান, নবী ও ওমরজাইয়ের মতো তারকা ক্রিকেটাররা দলকে সামনে টানতে প্রস্তুত।
রশিদ ও নবীর অলরাউন্ড দক্ষতা এই ফরম্যাটে আফগানিস্তানের বড় সম্পদ, বিশেষ করে ধীর উইকেটে তাদের স্পিন ডুয়ো বাংলাদেশি ব্যাটারদের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
বাংলাদেশ দল:
মেহেদি হাসান মিরাজ (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, জাকের আলি, শামীম হোসেন, নুরুল হাসান, রিশাদ হোসেন, তানভির ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান, হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা।
আফগানিস্তান দল:
হাশমতুল্লাহ শাহিদী (অধিনায়ক), রহমত শাহ (সহ-অধিনায়ক), রহমানুল্লাহ গুরবাজ, ইকরাম আলিখিল, ইব্রাহিম জাদরান, সেদিকুল্লাহ আতাল, দারউইশ রাসুলি, আজমতুল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, নাঙ্গোলিয়া খারোতে, মোহাম্মদ গাজানফার, আবদুল্লাহ আহমাদজাই, বশির আহমাদ ও বিলাল সামি।
আগামীকাল সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে দুই দলের নতুন অধ্যায়। টি-টোয়েন্টির মতো ওয়ানডেতেও জয়ের ধারায় থাকতে চায় বাংলাদেশ—আত্মবিশ্বাস, প্রতিশোধ ও নতুন সূচনার প্রত্যাশায় মাঠে নামছে মিরাজবাহিনী।
