নির্বাচন কমিশন (ইসি) একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা চেয়ে আসছে। এবার সেই আহ্বান জানালেন নারী সমাজের প্রতি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা সমাজে গ্রহণযোগ্য ও প্রভাবশালী। তাদের ইতিবাচক ভূমিকা জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
নারী নেত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময়
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় মতবিনিময় সভা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সিইসি নাসির উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন চারজন নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও সংগঠক খুশী কবির, শিরীন পারভিন হক, নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, ডা. ফওজিয়া মোসলেম ও মালেকা বানু প্রমুখ।
“নারীরা আমাদের বিশেষ দূত”—সিইসি
সভায় সমাপনী বক্তব্যে সিইসি বলেন,
“আপনারা নারী সমাজে আমাদের বিশেষ দূত। জনগণের মাঝে পৌঁছে দিন আমাদের বার্তা— আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। এজন্য আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন,
“নারীরা সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। আপনাদের প্রতিটি কথা মানুষের মনে প্রভাব ফেলে। তাই আপনারা আমাদের আন্তরিকতা ও উদ্দেশ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিন— যাতে সবাই বুঝতে পারেন, এই নির্বাচন কমিশন সত্যিই একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য কাজ করছে।”
নারী ভোটারদের নিরাপত্তায় জোর
সিইসি বলেন,
“আমরা চাই নারী ভোটাররা যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে আসতে পারেন। তাই আপনারা যখন সংগঠনগুলোর সভা করেন, সেখানে নারী অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলুন। সবাইকে উৎসাহিত করুন যেন ভোটের দিনে কেন্দ্রে আসে।”
এসময় তিনি নারী নেত্রীদের প্রতি অনুরোধ জানান, জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও আস্থা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে।
নারী নেত্রীদের পরামর্শ ও দাবি
সভায় উপস্থিত নারী নেত্রীরা ভোটের পরিবেশ নিরাপদ রাখার ওপর জোর দেন। তাদের দাবি—
- নারী ও প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য আলাদা সহায়ক ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- ভোটের দিন ও আগের দিন নারী শ্রমিকদের ছুটি দিতে হবে, যেন তারা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন।
- নির্বাচনী এলাকায় নারী ভোটারদের নিরাপত্তায় বিশেষ নজরদারি ও কন্ট্রোল রুম চালু রাখতে হবে।
- ভোটের সময় বা পরে যেন কোনো মব বা সহিংসতা না ঘটে, সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
- কেউ যেন নারীর প্রতি অবমাননাকর প্রচারণা বা বিভাজনমূলক বক্তব্য দিতে না পারে, সে বিষয়ে ইসির তদারকি বাড়াতে হবে।
তারা আরও প্রস্তাব দেন— জাতীয় সংসদে বর্তমান ৩০০ আসনের পাশাপাশি নারীদের জন্য ১৫০টি সংরক্ষিত আসন রাখার মাধ্যমে মোট ৪৫০ আসনের ব্যবস্থা করা হোক।
নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন,
“আমাদের জন্য আশার বিষয় হলো— নির্বাচন কমিশনসহ সবাই এখন ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। আমরা চাই, নির্বাচন হোক অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, আর জনসম্পৃক্ততা তৈরি হলে সব সমস্যা কেটে যাবে।”
তিনি আরও বলেন, ইসি এখন থেকে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করবে, যাতে ভোটের দিন কোনো ভয়-ভীতি ছাড়াই নারী ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে পারেন।
সামনের লক্ষ্য
নারী নেত্রী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে এই মতবিনিময়ের মাধ্যমে ইসি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গণআস্থা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
সিইসির ভাষায়,
“আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা যেন সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসযোগ্য হয়— সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি। সকল শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণই এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সাফল্য হবে।”
