আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে “শাপলা” প্রতীক নিয়েই অংশগ্রহণ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) — এমন ঘোষণা দিয়েছেন দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, “শাপলা প্রতীক নিতে কোনো ধরনের আইনি বাধা নেই। নির্বাচন কমিশন যদি তার স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখে, তাহলে এনসিপি শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে যাবে।”
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে নাটোরের কানাইখালী এলাকার আর.পি. কনভেনশন হলে আয়োজিত জেলা সমন্বয় সভার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে সারজিস আলম এই ঘোষণা দেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এনসিপি নেতারা, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং যুব শাখার সদস্যরা।
শাপলা প্রতীক দলের ঐতিহ্য: সারজিস
সংবাদ সম্মেলনে সারজিস আলম বলেন, “শাপলা প্রতীক আমাদের দলের আদর্শ ও ঐতিহ্যের প্রতীক। আমরা জনগণের অধিকার, শান্তি ও সৌহার্দ্যের রাজনীতি করি—যা শাপলার মতো নির্মল ও স্বচ্ছ। তাই কোনো অবস্থাতেই আমরা প্রতীকের মর্যাদা হারাতে পারি না।”
তিনি অভিযোগ করেন, কিছু গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে শাপলা প্রতীকের বিষয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। “যদি নির্বাচন কমিশন আইন ও সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে এনসিপির হাতে শাপলা প্রতীকই থাকবে,”—বলেন তিনি।
“নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা নির্ভর করবে ন্যায়বিচারের ওপর”
সারজিস আলম বলেন, “একটি দলকে তার পরিচিত প্রতীক থেকে বঞ্চিত করা মানে গণতন্ত্রের প্রতি অন্যায় করা। নির্বাচন কমিশন যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয় যা জনগণের ইচ্ছার পরিপন্থী, তাহলে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা হারাবে। কমিশনকে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা বিশ্বাস করি, জনগণই আমাদের শক্তি। জনগণ যেমন রাজনীতির মালিক, প্রতীকও তাদের পরিচয়ের প্রতিফলন। তাই জনগণের প্রত্যাশা পূরণে শাপলা প্রতীকের মাধ্যমেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেব।”
দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে দৃঢ় অবস্থান
দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে এর প্রতিটি অঙ্গ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নয়।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের ভেতরে বা বাইরে থেকে যারা স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের রাজনৈতিক ঐক্য আরও সুদৃঢ় করতে হবে।”
জনগণের কল্যাণে ইতিবাচক রাজনীতি
সারজিস আলম বলেন, “এনসিপি কোনো সংঘাত নয়, ইতিবাচক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আমরা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে মূল লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে এগোচ্ছি। আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ হবে, মানুষ শান্তি, সুশাসন ও পরিবর্তনের রাজনীতি চায়।”
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রামে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের দুঃখ-কষ্ট বুঝে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এই দলটি শুধু প্রতীক নয়, এটি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিচ্ছবি।”
সভায় নেতাদের সংহতি
জেলা এনসিপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান সভায় বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, শাপলা প্রতীকই আমাদের ঐক্যের প্রতীক। সারজিস ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা মাঠে নেমে কাজ করব, জনগণের কাছে আমাদের বার্তা পৌঁছে দেব।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা সদস্য সচিব শামীম আহমেদ, নারী বিষয়ক সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন, যুব নেতা রাশেদুল ইসলাম রনি ও ছাত্রনেতা আজিম উদ্দিন।
তারা সবাই একমত হয়ে বলেন, “এনসিপি শান্তি, ন্যায় ও ন্যায্যতার রাজনীতি করে। তাই শাপলা প্রতীক হারানোর প্রশ্নই আসে না।”
নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতি
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আসন্ন নির্বাচনে তারা অন্তত ২০০ আসনে প্রার্থী দিতে চায়। প্রতিটি অঞ্চলে মনোনয়ন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি দলীয় ইশতেহারে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
সারজিস আলম বলেন, “আমরা চাই একটি মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। নির্বাচন যেন কেবল ভোটের উৎসব না হয়ে জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের উৎসব হয়।”
