বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন জগতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন সমাজের বিভিন্ন অসম বিষয় নিয়ে সোচ্চার থাকেন। কখনো কখনো তার মতামত হয় বিতর্কিত, আবার কখনো তা হয় অনুপ্রেরণার উৎস। সম্প্রতি বাঁধন নিজের জীবন, ব্যর্থতা ও স্বাধীনতা নিয়ে একটি খোলামেলা পোস্ট শেয়ার করেছেন, যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। পোস্টের শিরোনামই “সমাজ আর একজন অস্বস্তিকর নারী”, যা তার ব্যক্তিত্বের এক অনন্য দিক ফুটিয়ে তোলে।
বাঁধন লিখেছেন, তিনি চেয়েছিলেন এমন একজন নারী হোন, যিনি সবাইকে খুশি রাখতে পারেন, অনুগত, বাধ্য এবং শান্তভাবে সমাজের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেন। কিন্তু জীবনের পথে তিনি বুঝেছেন, এটি সম্ভব নয়। বাঁধন স্পষ্ট করেছেন,
“আমি সেই মানুষটা হতে পারিনি, যাকে সবাই দেখতে চেয়েছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম, সত্যি করেছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম পরিবারের প্রত্যাশিত মেয়ে হতে, চেষ্টা করেছিলাম সমাজের বানানো ‘নারী’ হতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। আর সেই ব্যর্থতার জন্য আজ নিজেকেই ধন্যবাদ জানাই।”
বাঁধনের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, তিনি অন্য কারও জীবন স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী বাঁচতে জন্মেননি। তার বক্তব্য অনুযায়ী,
“আমার কথা অনেকের কাছে অস্বস্তিকর, আমার কাজ অনেকের সান্ত্বনার সীমা ভেঙে দেয়। আমি সহজ মানুষ নই, কিন্তু নির্মমও নই। আমি কাউকে আঘাত দিই না, অসম্মানও করি না, যদিও অনেকেই আমার প্রতি তা করে।”
চলতি মাসের শেষে ৪২ বছর পূর্ণ করবেন বাঁধন। এই দীর্ঘ সময়ের সংগ্রাম, নাটকীয়তা এবং বিতর্কের মধ্যে তিনি জীবনের একটি শান্তি খুঁজে পেয়েছেন। নিজেকে আবিষ্কারের এই পথচলায় বাঁধন জানিয়েছেন, চল্লিশের পর থেকে তিনি তার জীবনের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পেয়েছেন।
“চল্লিশের পর এসে আমি নিজের সঙ্গে শান্তিতে আছি। এখন আমি বাঁচি আমার মতো করে—স্বাধীনভাবে, সৎভাবে, বিনা ক্ষমাপ্রার্থনায়। কেউ এতে কষ্ট পেলে, উপেক্ষা করুক, ব্লক করুক, ঘৃণা করুক। আমার কিছু আসে যায় না। কারণ, যাদের আমি অস্বস্তিতে ফেলি, তাদের পাশাপাশি আছে অনেকেই, যারা আমাকে ভালোবাসে, বোঝে, আমার সত্যে শক্তি খুঁজে পায়। আর সবচেয়ে বড় কথা—আমি নিজেকে ভালোবাসি।”
বাঁধনের পোস্টে পরিস্কার হয়েছে, তিনি সমাজের পুরনো ধ্যানধারণার কাছে অস্বস্তিকর, কারণ তিনি আসল নারীর স্বাধীনতা এবং স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, সমাজ এখনো নারীর স্বতঃস্ফূর্ততা এবং শক্তিকে ভয় পায়। তিনি বলেন,
“আমি ভাঙা নই। আমি শুধু এমন এক পৃথিবীর কাছে অস্বস্তিকর, যে পৃথিবী এখনো আসল নারীকে ভয় পায়। ভালোবাসি তোমায়, আজমেরী হক বাঁধন। তুমি যে নারী হতে চেয়েছিলে, শেষ পর্যন্ত তুমি সেই নারীই হয়েছো।”
বাঁধনের এই খোলামেলা ভাবনা শুধুই ব্যক্তিগত আত্মসমীক্ষা নয়; এটি একটি প্রেরণা, বিশেষ করে যুবসমাজের নারীদের জন্য, যারা সমাজের ধ্রুপদী প্রত্যাশা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে তাদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, একজন নারী হতে হলে সবসময় সমাজের মানদণ্ড অনুসরণ করতে হয় না; বরং নিজের সত্যিকারের পরিচয় এবং শক্তিকে গ্রহণ করাই হলো সার্থকতা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ভক্ত, সহকর্মী ও সাধারণ মানুষ তার সাহসী বক্তব্যের প্রশংসা করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের স্বচ্ছল, খোলামেলা প্রকাশনার মাধ্যমে সমাজে নারীর শক্তি ও স্বাধীনতার বার্তা আরও সুস্পষ্টভাবে পৌঁছাচ্ছে।
আজমেরী হক বাঁধনের জীবনের এই অধ্যায় শিক্ষা দেয় যে ব্যর্থতা নয়, বরং স্বকীয়তা এবং নিজেকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই একজন নারী নিজের পূর্ণ শক্তি উদ্ঘাটন করতে পারে। সমাজের সকল প্রথাগত ধ্যানধারণার মাঝেও বাঁধন স্থাপন করেছেন নিজস্ব উদ্দীপনা ও উদার দৃষ্টান্ত, যা অনেকে অনুসরণ করতে চাইবেন।
