জেলা শহরজুড়ে ছিল আনন্দের আমেজ, মুখে মুখে প্রশংসা—পঞ্চগড়ের সন্তানদের সাফল্য এখন সবার গর্ব। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ৭৪ জন কৃতী শিক্ষার্থী এবং বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত ৮ জন মেডিকেল অফিসারকে সংবর্ধনা দিয়েছে ‘পঞ্চগড়স্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ ও ‘সমকাল সুহৃদ সমাবেশ’।
শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে পঞ্চগড় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় এ বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন। সভাপতিত্ব করেন পঞ্চগড়স্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ইমরান আল আমিন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠন দুটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারুল ইসলাম, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আফরোজা বেগম রীনা, অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক মকবুল হোসেন এবং জ্যেষ্ঠ গণমাধ্যমকর্মী শহীদুল ইসলাম শহীদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও জাকির হোসেন বলেন,
“পঞ্চগড়ের শিক্ষার্থীরা আজ দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের মেধার পরিচয় দিচ্ছে, কেউ কেউ আবার বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সেবায় নিয়োজিত হচ্ছে। এটা আমাদের জেলার জন্য এক বিশাল গর্ব। এই কৃতী তরুণরা ভবিষ্যতে সমাজ ও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি এলাকার সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তার মানবসম্পদ। শিক্ষার্থীরা জ্ঞান, সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে এগিয়ে গেলে তারা শুধু নিজেদের নয়, পুরো জাতির সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলবে।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনের যে স্রোত, তার প্রতিফলন দেখা যায় এই ধরনের সাফল্যে। তাঁরা মনে করেন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি শুধু সম্মানই নয়, এটি সমাজে অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দেয়।
বিশেষ অতিথি ডা. আফরোজা বেগম রীনা বলেন,
“একজন মেধাবী শিক্ষার্থী যখন দেশের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে, তখন তার সাফল্য পুরো সমাজকে আলোকিত করে। আজকের সংবর্ধনা সেই আলোর উৎসব।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা প্রতিটি কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে গোলাপ ফুল ও সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। মঞ্চজুড়ে ছিল উৎসবের আবহ, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মুখে ছিল গর্বের হাসি।
সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রতিবছর জেলার উচ্চশিক্ষায় কৃতী শিক্ষার্থীদের এমনভাবে সম্মাননা জানানো হবে, যাতে নতুন প্রজন্ম উৎসাহ পায় শিক্ষায়, নৈতিকতায় ও সমাজসেবায় এগিয়ে যেতে।
অধ্যাপক ইমরান আল আমিন বলেন,
“আমরা চাই পঞ্চগড়ের তরুণ প্রজন্ম শুধু ভালো ফল নয়, ভালো মানুষ হোক। আজ যারা বিশ্ববিদ্যালয় ও পেশাগত শিক্ষায় স্থান পেয়েছে, তারা যেন ভবিষ্যতে দেশের নেতৃত্বে ভূমিকা রাখতে পারে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংগীত ও কবিতা পরিবেশনের মাধ্যমে তরুণরা প্রকাশ করে তাদের স্বপ্ন ও কৃতজ্ঞতা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী রাফিয়া সুলতানা, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছেন, বলেন,
“আজকের এই সংবর্ধনা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে। এখন লক্ষ্য শুধু ভালো ফল নয়, সমাজে কিছু অবদান রাখা।”
এভাবেই ছোট সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড় আজ দেশের তরুণ প্রতিভার নতুন ঠিকানা হয়ে উঠছে। এই সংবর্ধনা যেন এক প্রতীক—যেখানে মেধা, অধ্যবসায় আর সততা মিলে নির্মাণ হচ্ছে এক নতুন সম্ভাবনার বাংলাদেশ।










সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited