বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ শুক্রবার (৫ অক্টোবর) বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষক সমাজের অবদানকে স্মরণ ও সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যে দিনটি প্রতিবছর সারাবিশ্বে পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য—“শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি”—শিক্ষা খাতের ঐক্য, সহযোগিতা ও পেশাগত মর্যাদার গুরুত্বকে তুলে ধরছে।
১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালনের সূচনা হয়। মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষকতার পেশাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করা, শিক্ষকদের অধিকার রক্ষা করা এবং সমাজে তাঁদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া। এরপর থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নানা আয়োজনে উদযাপিত হয়ে আসছে এই দিনটি।
বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে “গুণী শিক্ষক সংবর্ধনা” অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ আয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্তরের ১২ জন শিক্ষককে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে ৩৬ জন শিক্ষককে মনোনীত করা হয়েছিল, যাঁদের মধ্যে থেকে সর্বশেষ ১২ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরি ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রেখে শিক্ষা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
দিবসটির জাতীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সম্মাননা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন করা হয়েছে।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের উৎপত্তি ১৯৯৩ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ সভায়। সেই সভায় ৫ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরের বছর ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মতো দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউনেস্কোর অনুমোদনক্রমে প্রতিবছর পৃথক প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর যৌথভাবে দিবসের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন শিক্ষামন্ত্রী, বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব।
বক্তারা বলছেন, একজন শিক্ষক শুধু পাঠদাতা নন, তিনি একজন দার্শনিক, চিন্তাশীল ও সমাজগঠনকারী ব্যক্তি। তাঁদের শ্রম ও নিষ্ঠায়ই গড়ে ওঠে একটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। প্রযুক্তিনির্ভর যুগে শিক্ষার রূপান্তর ঘটলেও শিক্ষক এখনো শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রে আছেন—এই বার্তাই দিবসটির মূল দর্শন।
এছাড়া, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর ঢল।
শিক্ষক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন। তাঁরা দেশের সকল শিক্ষককে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, “শিক্ষকরা জাতি গঠনের কারিগর, তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।”
দেশের শিক্ষা খাতে গুণগত পরিবর্তন ও শিক্ষকতার পেশার মর্যাদা বৃদ্ধির প্রত্যয়ে আজকের এই বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করছে পুরো বাংলাদেশ।
