আনন্দ, উল্লাস আর ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। খড়্গপুরে অনুষ্ঠিত হলো দেশের অন্যতম বড় দশেরা উৎসব। ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খ্যাত খড়্গপুর শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার সুবিশাল ময়দানে আয়োজিত এই রাবণ দহন উৎসবের সাক্ষী থাকলেন হাজার হাজার মানুষ।
প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে দিনভর অনিশ্চয়তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ কেটে গিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হয় রাবণ বধের এই মহোৎসব। আয়োজকদের দাবি, এটি শুধু খড়্গপুর বা পশ্চিম মেদিনীপুর নয়, গোটা বাংলার গর্বের একটি উৎসব, যা এক শতক ধরে চলে আসছে।
ভিজে গেল রাবণ, তবুও উৎসব থামেনি
দশমীর সকাল থেকেই প্রবল বর্ষণ। আবহাওয়ার কারণে মাঠ কাদা আর জলে ভরে যায়। ৫৫ ফুট উচ্চতার বিশাল রাবণের কাঠামো ভিজে নরম হয়ে পড়ে। দর্শকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিল— এ বছর কি আদৌ দহন সম্ভব হবে? কিন্তু আয়োজকদের অদম্য প্রচেষ্টা আর প্রশাসনের সহযোগিতায় সন্ধ্যায় ময়দানে জ্বলে ওঠে ঐতিহ্যের শিখা।
রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে রাবণ দহন করেন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। যদিও প্রত্যাশা মতো রাবণের দশটি মাথা একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়নি, তবুও রাবণের পতনে উল্লাসে ফেটে পড়ে সমাগম। উদ্যোক্তাদের মতে, প্রবল বর্ষণের কারণে যান্ত্রিক গোলযোগ ঘটেছে।
১০১ বছরের ঐতিহ্য
খড়্গপুরের দশেরা উৎসব এ বার পা দিল ১০১তম বর্ষে। শতবর্ষ ছাড়িয়ে এই আয়োজন এখন খড়্গপুর শহরের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। উদ্যোক্তা ও প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ সরকার বলেন,
“এই রাবণ দহন উৎসব দেখতে শুধু জেলা নয়, রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও দর্শকরা আসেন। মিনি ইন্ডিয়ার মতো শহরে এটাই সর্বাধিক আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান।”
স্থানীয় মানুষের মতে, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায় একসঙ্গে এখানে অংশ নেন। তাই এই উৎসব কেবল ধর্মীয় নয়, বরং সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক।
অতিথিদের উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার, বিধায়ক অজিত মাইতি, প্রাক্তন বিধায়ক ও কমিটির সভাপতি প্রদীপ সরকারসহ জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই পাঠিয়েছিলেন শুভেচ্ছাবার্তা। এ বারও নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিপুল ভিড় সামলাতে মোতায়েন ছিল পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী।
নিরাপত্তা ও সাফল্যের বার্তা
পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন,
“এক শতক ধরে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে যাওয়া সহজ নয়। এ বারও সমস্ত ধরনের নিরাপত্তা বজায় রেখে অনুষ্ঠান সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
উদ্যোক্তারা জানান, আগামী বছর আরও বড় আকারে এই উৎসব উদ্যাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এক উৎসবে মিশে গেল আবেগ ও ঐতিহ্য
যদিও অতিবৃষ্টি দর্শকদের কিছুটা হতাশ করেছে, তবুও রাবণ দহনের আগুনে মানুষের উল্লাস কোনোভাবেই কমেনি। উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের করতালি আর শঙ্খধ্বনিতে মুখরিত হয়েছিল খড়্গপুরের আকাশ।
এক শতকের বেশি সময় ধরে টিকে থাকা এই উৎসব প্রমাণ করে, দুর্যোগ যতই আসুক, ঐতিহ্যের প্রদীপ কখনও নিভে যায় না।
