বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর আসন্ন দুই দিনে দেশের আটটি বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের আশঙ্কা জানিয়েছে। এর ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসের পাশাপাশি বড় শহরগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
নিম্নচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাব
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি গভীর নিম্নচাপ অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সক্রিয় রয়েছে মৌসুমি বায়ু। এই পরিস্থিতির কারণে আজ বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকেল ৩টা থেকে শুরু করে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃষ্টিপাতের তীব্রতা ও পরিমাণ অনেক জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। ফলে জনজীবনে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসের আশঙ্কা
বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি জেলাগুলোতে ভারী বর্ষণের কারণে ভূমিধ্বসের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে অতীতে টানা বর্ষণে ভয়াবহ ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। সেসব অভিজ্ঞতার আলোকে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পাহাড়ি এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, পাহাড়ি এলাকায় যারা ঝুঁকিপূর্ণ ঢালে বসবাস করছেন তাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জরুরি প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক করা হয়েছে যাতে বর্ষণ বাড়লে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
নগরজীবনে ভোগান্তির শঙ্কা
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে অস্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন, অপ্রস্তুত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় নগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়তে পারেন।
বিশেষ করে ঢাকার মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকা, মালিবাগ, শান্তিনগর, বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় বর্ষণের সময় পানি জমে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। অপরদিকে চট্টগ্রামের হালিশহর, আগ্রাবাদ ও বাকলিয়া এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়মিত চিত্রে পরিণত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি হলে এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে যেতে পারে।
কৃষিক্ষেত্রে প্রভাব
বর্ষণের এই পূর্বাভাস কৃষিক্ষেত্রেও মিশ্র প্রভাব ফেলতে পারে। আমন ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কৃষকেরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির অতিরিক্ত চাপ ও জমে থাকা পানি ধানগাছের শিকড়ে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
একইসঙ্গে সবজি চাষাবাদে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে শীতকালীন সবজি রোপণ শুরু হয়েছে, সেখানে অতিরিক্ত বর্ষণ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
জনসাধারণের করণীয়
আবহাওয়া অধিদপ্তর জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারীদের অনুরোধ করা হয়েছে, টানা বৃষ্টির সময় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না থাকতে। নগরবাসীদের প্রতি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় বাইরে বের না হতে এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ ও পানিতে ভেজা জায়গায় সাবধানতা অবলম্বন করতে।
অতীতের অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশে ভারী বর্ষণজনিত জলাবদ্ধতা ও ভূমিধ্বস নতুন কিছু নয়। ২০১৭ সালের জুনে রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টির ফলে ভয়াবহ ভূমিধ্বস হয়, যাতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওই ঘটনার পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে আসছেন যে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং অব্যবস্থাপনা মূলক নগর পরিকল্পনা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের এই সতর্কবার্তা সাধারণ মানুষের জন্য এক ধরনের আগাম প্রস্তুতির সংকেত। আগামী ৪৮ ঘণ্টা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জীবনযাত্রায় ভোগান্তি বাড়তে পারে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা এবং বড় শহরগুলোতে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জনগণের উচিত সচেতন ও প্রস্তুত থাকা।
