সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
আবহাওয়ার খবরে বলা হয়েছে, দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় এই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেশি থাকবে। পাশাপাশি দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
লঘুচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপ
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিঙ্গনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপে এবং পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে এটি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিল। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিস্টেমটি আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এর প্রভাবে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ুও বাংলাদেশের উপর সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল আকার ধারণ করেছে।
রাজধানীর পরিস্থিতি
ঢাকায় বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল (বুধবার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল নরসিংদীতে, ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় সূর্যাস্ত হবে সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে।
বিশেষজ্ঞদের মত
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মৌসুমি বায়ুর শক্তিশালী অবস্থান এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের কারণে দেশের আবহাওয়া আগামী কয়েক দিন অস্থিতিশীল থাকতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ভারী বর্ষণ ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। এর ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুব হোসেন বলেন, “অক্টোবরের শুরুতেই এমন নিম্নচাপের সৃষ্টি অস্বাভাবিক নয়। তবে এর তীব্রতা ও অগ্রগতির দিকটি নজরে রাখতে হবে। যদি এটি শক্তি সঞ্চয় করে আরও ঘনীভূত হয়, তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।”
কৃষি ও দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব
অব্যাহত বৃষ্টিপাত কৃষিক্ষেত্রে যেমন ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তেমনি চ্যালেঞ্জও তৈরি করতে পারে। আমন ধানের জমিতে অতিরিক্ত জল জমে গেলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে যেখানে খরা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, সেখানে এই বৃষ্টি মাটির আর্দ্রতা ফিরিয়ে এনে ফসল বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, শহরাঞ্চলে বৃষ্টির কারণে যানজট ও জলাবদ্ধতার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো মহানগর এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে থাকে। এই পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন যাতায়াত ব্যাহত হতে পারে।
স্বাস্থ্যঝুঁকিও রয়েছে
আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আবারও মাথাচাড়া দিতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন ক্ষেত্র বেড়ে যায়।
করণীয়
আবহাওয়া অধিদপ্তর নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলায় জেলেদের অগভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শহরাঞ্চলে নাগরিকদের অযথা বাইরে বের না হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ছাতা ও রেইনকোট ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্কবার্তা পাঠানো হবে।
সারাদেশে চলমান বৃষ্টিপাত জনজীবনে কিছুটা দুর্ভোগ বাড়ালেও কৃষিজমির জন্য উপকারী হতে পারে। তবে লঘুচাপ থেকে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের গতিপ্রকৃতি এবং এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেই পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
