বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আসন্ন নির্বাচন ঘিরে হঠাৎ করেই বড়সড় নাটকীয়তা সৃষ্টি হলো। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল ওপেনার ও সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল বুধবার (১ অক্টোবর) নিজের পুরো প্যানেলসহ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন সকালে তামিম বিসিবি কার্যালয়ে এসে রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চিঠি জমা দেন। তিনি ক্লাব ক্যাটাগরি (ক্যাটাগরি–২) থেকে পরিচালক পদে লড়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ
সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে তামিম জানান, “এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরকারি হস্তক্ষেপ স্পষ্ট। বেশ কিছু ক্লাবকে কাউন্সিলরশিপ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াতেই আমরা স্বচ্ছতা পাইনি। এজন্যই আমরা এই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তামিমের মতে, শুধুমাত্র কিছু গোষ্ঠীর সুবিধার্থেই পরিকল্পিতভাবে কাউন্সিলর তালিকায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
হাইকোর্টের রায়ের প্রভাব
তামিমের এই নাটকীয় সরে দাঁড়ানোর পেছনে মঙ্গলবারের হাইকোর্টের একটি আদেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদের দায়ের করা রিটের শুনানিতে আদালত তৃতীয় বিভাগ থেকে আসা ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ স্থগিত করেন।
এ রায়ের পর থেকেই ক্রিকেট অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল যে তামিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। অবশেষে সেই আশঙ্কাই বাস্তবে রূপ নিল।
তামিমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন
কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকেই বিসিবির কর্মকাণ্ড নিয়ে খোলাখুলি সমালোচনা করে আসছিলেন তামিম ইকবাল। এমনকি নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
কিন্তু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন তিনি। এতে তার ভবিষ্যতে বিসিবি প্রশাসনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পরিকল্পনা এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
বিসিবি নির্বাচনে প্রভাব
তামিম ও তার প্যানেলের সরে দাঁড়ানোয় নির্বাচনী প্রতিযোগিতা অনেকটাই একতরফা হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আজ দুপুর ২টায় প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, তামিমের মতো জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের সরে দাঁড়ানো বিসিবি নির্বাচনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে।
ক্রিকেটপাড়ার প্রতিক্রিয়া
বিসিবির সাবেক কর্মকর্তাদের অনেকে মনে করছেন, তামিমের এই সিদ্ধান্ত দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে নতুন ধাক্কা বয়ে আনবে। কেউ কেউ আবার মনে করছেন, তার সরে দাঁড়ানো সরকারের সঙ্গে বিসিবির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে আরও স্পষ্ট করেছে।
ভক্ত ও সমর্থকদের মধ্যে হতাশাও কম নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন—“মাঠে যেমন লড়াকু তামিমকে চাই, তেমনি প্রশাসনেও তার নেতৃত্ব প্রয়োজন।”
বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। মাঠের সাফল্যের পাশাপাশি প্রশাসনিক স্থিতিশীলতাও জরুরি। তবে বিসিবির আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা দেশের ক্রিকেটকে আরও বিভক্ত করে তুলবে কিনা—এই প্রশ্ন এখন সবার মনে।
