মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত প্রথম উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন অর্থায়নের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
মোট ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দেবে ৬০ মিলিয়ন ডলার এবং যুক্তরাজ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৩৬ মিলিয়ন ডলার।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইউনূসের ভাষণ: প্রত্যাবাসনই স্থায়ী সমাধান
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন,
“রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধান হলো তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন। অর্থায়ন ক্রমেই কমে আসছে। তাই এখনই নিরাপদ প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।”
ড. ইউনূস রাখাইনে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, সংকট দীর্ঘায়িত হলে কেবল বাংলাদেশ নয়, গোটা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাই হুমকির মুখে পড়বে।
সহায়তার গুরুত্ব ও প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে, যাদের অধিকাংশই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা ও নিপীড়নের পর পালিয়ে এসেছে।
ক্যাম্পে বসবাসরত এই বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রতিবছরই কমে আসছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় অর্থের মাত্র ৩০ শতাংশ জোগাড় হয়েছে।
তাই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের এই নতুন অর্থায়নকে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখছে।
ভবিষ্যৎ করণীয়
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এখন মূল দাবি—
- রাখাইনে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা
- রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা
- প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ তৈরি
বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ড. ইউনূসের প্রস্তাবিত সাত দফা সুপারিশ এখন আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে এবং এর ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে।
রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ৯৬ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, কেবল অর্থ নয়, জরুরি ভিত্তিতে মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করাই হতে পারে সংকট সমাধানের একমাত্র কার্যকর পথ।
