বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধানে দেশের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বাগেরহাট ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি)। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ প্রতিষ্ঠান শুধু দেশে নয়, বিদেশেও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ার কারখানা
আইএমটির শিক্ষার্থীরা চার বছর মেয়াদি শিপবিল্ডিং টেকনোলজি এবং মেরিন টেকনোলজি কোর্স সম্পন্ন করে সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিপইয়ার্ড, ডকইয়ার্ড, শিল্প কারখানা, এমনকি বিদেশের নামকরা কোম্পানিগুলোতেও চাকরির সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হাবিবুল্লাহ জানান, “দেশে-বিদেশে চাকরির বাজারে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। বাগেরহাট আইএমটি সেই চাহিদা পূরণে অবদান রাখছে।” তিনি আরও জানান, এখান থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ইরাক, সিঙ্গাপুর, জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে কাজ করছেন।
কোর্স ও প্রশিক্ষণ
ইনস্টিটিউটটিতে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি ডিপ্লোমা প্রোগ্রামের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স।
দীর্ঘমেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স (৪ বছর মেয়াদি):
- মেরিন টেকনোলজি
- শিপবিল্ডিং টেকনোলজি
স্বল্পমেয়াদি কোর্সসমূহ:
- ৬ মাসের জাপানি ভাষা শিক্ষা
- ৪ মাসের অ্যাডভান্সড ওয়েলডিং
- ইলেকট্রিক্যাল ইনস্টলেশন
- এ্যাড মেইনটেইনান্স
- মেশিন শপ প্র্যাকটিস
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- কেয়ার গিভিং
এসব কোর্স সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীরা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সহজেই চাকরি পাচ্ছেন। বিশেষত জাপানি ভাষা কোর্স বিদেশে চাকরির সুযোগ তৈরি করছে।
অবকাঠামো ও শিক্ষার পরিবেশ
বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলি বৈটপুরে দড়াটানা সেতুর একপ্রান্তে ২.৫ একর জায়গাজুড়ে আইএমটি অবস্থিত। চারতলা বিশিষ্ট দুটি আবাসিক ভবনে রয়েছে ১৫০ শয্যার ছাত্রাবাস ও ১৬০ শয্যার ছাত্রীনিবাস।
ইনস্টিটিউটে বর্তমানে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, যাদের মধ্যে একজন নারীও আছেন। জাপানি ভাষা কোর্সে অংশ নিচ্ছেন ৪৮ জন শিক্ষার্থী।
ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগ
ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়। আর শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয় পিএসসি কর্তৃক নন-ক্যাডার নিয়োগ প্রক্রিয়া, বিভিন্ন প্রকল্প ও অভিবাসন তহবিলের মাধ্যমে।
কর্মসংস্থানে অবদান
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাগেরহাট আইএমটি দেশের তরুণদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করছে। শিক্ষার্থীরা দেশি-বিদেশি শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে অবদান রেখে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি শুধু শিক্ষা নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
