বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত ৫২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম বহনকারী একটি জাহাজ চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ার বর্হিনোঙ্গরে এসে পৌঁছেছে। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নগদ ক্রয় চুক্তির আওতায় বড় চালান
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৭ জুলাই রাশিয়ার সঙ্গে সম্পাদিত নগদ ক্রয় চুক্তির আওতায় এই গম বাংলাদেশে এসেছে। ‘এমভি পার্থি’ নামের জাহাজে করে সরাসরি রাশিয়া থেকে এটি দেশে আনা হয়।
চুক্তি অনুযায়ী—
- ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গম চট্টগ্রাম বন্দরে,
- এবং ২১ হাজার মেট্রিক টন গম মোংলা বন্দরে খালাস করা হবে।
এই ধাপে ধাপে খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে গমের সরবরাহ আরও স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।পরীক্ষা শেষে খালাসের প্রস্তুতি
জাহাজে থাকা গমের নমুনা ইতোমধ্যেই পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। গুণগত মান নিশ্চিত হওয়ার পর দ্রুত খালাস কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
একজন মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গম খালাস প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুত বিভিন্ন স্থানে সরকারি খাদ্য গুদামে মজুত করা হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী টিসিবি ও সরকারি খাতের অন্যান্য বিতরণ কার্যক্রমে এ গম সরবরাহ করা হবে।
খাদ্য নিরাপত্তায় সরকারের পদক্ষেপ
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মেট্রিক টন গমের প্রয়োজন হয়। এর বড় একটি অংশ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বৈশ্বিক বাজারে দাম বাড়া, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে গম আমদানি বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার বিকল্প উৎস খুঁজে রাশিয়া থেকে বড় চালান আনতে উদ্যোগ নেয়। এর ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য গমজাত পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া থেকে গম আমদানির এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। গম শুধু রুটি, বিস্কুট বা বেকারি পণ্যে নয়, শিল্পখাতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। ফলে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলে বাজারে অস্থিরতা কমবে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের এই উদ্যোগ কেবল স্বল্পমেয়াদে নয়, দীর্ঘমেয়াদেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বৈশ্বিক বাজারের ওপর চাপ কমিয়ে বিকল্প সরবরাহ চেইন তৈরি করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেবল রাশিয়া নয়, কাজাখস্তান, কানাডা এবং ইউক্রেন থেকেও গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের জন্য প্রণোদনা কর্মসূচিও চালু রয়েছে।
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে গম আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে। তবে ততদিন পর্যন্ত বড় আকারে আমদানি অব্যাহত থাকবে।”
