পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক প্রবেশ কখনোই বন্ধ করা হয়নি। তবে দ্বীপের নাজুক পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করতে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পান্থপথে পানি ভবনে আয়োজিত ‘মার্ক এঞ্জেলো রিভার অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ হোসেন, বাংলাদেশ নদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এনায়েতুল্লাহ ও প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুকিত মজুমদার বাবু উপস্থিত ছিলেন।
সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিয়ে অপপ্রচার
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সেন্টমার্টিনে পর্যটক প্রবেশ নিয়ে অনেক অপপ্রচার চলছে। বাস্তবে কখনোই পর্যটক প্রবেশ বন্ধ করা হয়নি। তবে সেখানে যেতে হলে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে। জাহাজ থেকে নামার পর কেউ দুই ঘণ্টার বেশি অবস্থান করতে পারবে না। ২০১৬ সাল থেকেই রাত্রীযাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে—আমরা কেবল সেটাই বাস্তবায়ন করছি।”
তিনি আরও জানান, দ্বীপে প্রবেশে কারও জন্য বাধা নেই। তবে যাত্রীরা পরিদর্শন শেষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবার জাহাজে ফিরে আসতে হবে। এর মাধ্যমে দ্বীপের নাজুক পরিবেশকে পর্যটনের চাপ থেকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সারা বছর ভ্রমণ সম্ভব, বর্ষায় কিছু সীমাবদ্ধতা
উপদেষ্টা জানান, সেন্টমার্টিনে সারা বছরই পর্যটক যাতায়াত করতে পারবেন। তবে বর্ষাকালে উত্তাল সাগরের কারণে যাতায়াতে কিছুটা ঝুঁকি তৈরি হয়। এই সময় ভ্রমণে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয় মূলত যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য।
নদী রক্ষায় জাতীয় উদ্যোগ
সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গ ছাড়াও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দেশের নদীগুলো রক্ষায় সরকারের চলমান উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি জানান, “আমরা ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে নদী দূষণমুক্তকরণের প্রতিবেদন নিয়েছি। বান্দরবান ছাড়া বাকি ৬৩ জেলা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে হালদা, করতোয়া, তুরাগ, কীর্তনখোলা—এমন ১৮টি নদীকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে দূষণমুক্ত করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আশা করি ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করতে পারবো।”
নতুন তালিকায় আরও নদী যুক্ত হবে
আন্তনদী সমীক্ষা অনুযায়ী দেশে ১১৪টি নদীর তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবিদদের অভিযোগ অনুযায়ী সুন্দরবন ও পাহাড়ি অঞ্চলের কিছু নদী বাদ পড়েছে। উপদেষ্টা জানান, আগামীতে সেসব নদীকেও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বড় প্রকল্প
তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যাসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ নদী দূষণমুক্ত করার জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালেই ডিসেম্বরের মধ্যে এর কার্যক্রম দৃশ্যমান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ সম্মাননা প্রদান
অনুষ্ঠানে নদী রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুকিত মজুমদার বাবু।
পরিবেশ সুরক্ষা বনাম পর্যটন উন্নয়ন
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একটি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। একদিকে পর্যটন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই সরকার যে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি নিয়েছে—যাতে পর্যটক ভ্রমণ চালু থাকলেও রাত্রীযাপন ও দীর্ঘ সময় অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে—তা দ্বীপ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে পরিবেশবিদরা মনে করছেন।
