পুরান ঢাকার সরু গলি, টং দোকান ও যানজট পেরিয়ে হঠাৎই চোখে পড়ে এক শ্বেতদ্যুতিময় স্থাপনা—‘রোজ গার্ডেন’। নাম শুনে মনে হতে পারে ফুলের বাগান বা নার্সারি। কিন্তু না, এটি ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাগানবাড়ি।
রোজ গার্ডেনের জন্মকথা
উনিশ শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ আমলের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ঋষিকেশ দাস নির্মাণ করেন রোজ গার্ডেন। শোনা যায়, জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর বাগানবাড়িতে জলসায় অপমানিত হওয়ার পর প্রতিশোধের প্রেরণায় তিনি এ বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৩০ সালে তিনি চীন, ভারত, জাপান ও ইউরোপ থেকে আনা গোলাপের চারা রোপণ করেন প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর গড়া দোতলা বাড়ির চারপাশে। গোলাপের সমারোহ থেকেই নামকরণ হয় ‘রোজ গার্ডেন’।
মালিকানা ও পরিবর্তনের ইতিহাস
১৯৩৬ সালে ঋষিকেশ দাস এ বাড়ি বিক্রি করেন ব্যবসায়ী খান বাহাদুর কাজী আবদুর রশীদের কাছে। তখন এর নাম হয় ‘রশীদ মঞ্জিল’। পরবর্তীতে এটি পরিচিতি পায় ‘হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি’ নামে।
১৯৭০ সালে বেঙ্গল স্টুডিও এটির ইজারা নেয়। ১৯৮৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ভবনটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করে। নানা আইনি জটিলতার পর সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রায় ৩৩১ কোটি টাকায় রোজ গার্ডেন অধিগ্রহণ করে।
স্থাপত্য ও সৌন্দর্য
রোজ গার্ডেনের মূল ভবনটি গ্রিক শৈলীতে নির্মিত সাদা দালান। মার্বেল মেঝে, ইউরোপীয় শৈলির ছাদের কারুকাজ, খিলান আকৃতির দরজা, ঝাড়বাতি, প্রশস্ত সিঁড়ি ও সুবিশাল নাচঘর এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
চারপাশে রয়েছে শ্বেত পাথরের মূর্তি, কৃত্রিম ফোয়ারা, শান বাঁধানো পুকুর ও গোলাপ বাগান। মৌসুমে গোলাপের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে চারদিক।
দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণ
প্রতিদিন দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করেন রোজ গার্ডেনে। সংস্কার শেষে নতুন রূপে ফিরে আসা এ ঐতিহাসিক স্থাপনা খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। তবে রবিবার বন্ধ এবং সোমবার অর্ধদিবস খোলা থাকে। প্রবেশমূল্য ৩০ টাকা।
গুলিস্তান ও পল্টন থেকে রিকশায় (ভাড়া ৮০-১০০ টাকা) অথবা মতিঝিল মেট্রোরেল থেকে রিকশায় যাওয়া যায় সহজেই।
ছবি তোলার স্বর্গরাজ্য
ফোয়ারার ধারে, প্রাচীন প্রাসাদের সামনে বা গোলাপ বাগানে ছবি তুলতে পছন্দ করেন যারা—তাদের জন্য রোজ গার্ডেন এক অনন্য আকর্ষণ। প্রাচীন স্থাপত্য আর আধুনিক ক্যামেরার লেন্সে মিলেমিশে যায় ইতিহাস ও সৌন্দর্যের অপূর্ব এক কোলাজ।
