অবশ্যই! আপনার দেওয়া আর্টিকেলটিকে ভিত্তি করে আরও বিস্তারিত তথ্য, গভীর বিশ্লেষণ এবং আকর্ষণীয় বিবরণ যোগ করে ৬০০ শব্দের একটি পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ নিচে দেওয়া হলো।
গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে: নতুন নেতৃত্বে প্রবাসী সম্প্রদায়ের নতুন প্রত্যাশা
গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে (জিএসসি) যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐক্য, উন্নয়ন এবং কল্যাণের এক মূর্ত প্রতীক। এটি কেবল একটি সংগঠনই নয়, বরং শেকড়ের টানে প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম এবং মাতৃভূমির মধ্যে এক শক্তিশালী সেতুবন্ধন; এটি প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একনিষ্ঠ ধারক ও বাহক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন, যেখানে আগামী দুই বছরের জন্য নতুন, উদ্যমী এক নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে, যা সমগ্র ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও নতুন প্রত্যাশার সৃষ্টি করেছে।
জিএসসির গৌরবময় ইতিহাস ও বিস্তৃত লক্ষ্য
১৯৯৩ সালে একদল স্বপ্নদ্রষ্টা সমাজকর্মীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী সামাজিক ও দাতব্য সংগঠন হিসেবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। সংগঠনটির মূল লক্ষ্য বহুমুখী এবং সুদূরপ্রসারী। একদিকে যেমন এটি যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, সংক্রান্ত আইনি সহায়তা এবং সামাজিক অধিকার আদায়ে একটি সোচ্চার কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে, তেমনই অন্যদিকে বৃহত্তর সিলেটের আর্থ-সামাজিক, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে উন্নয়নে বিভিন্ন কল্যাণমুখী প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে।
গত তিন দশকের গৌরবময় পথচলায় জিএসসির কার্যক্রমের পরিধি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সিলেটের সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন, মেধাবী অথচ আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো মানবিক উদ্যোগগুলো সংগঠনটিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। প্রতি দুই বছর অন্তর অত্যন্ত স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে এর নেতৃত্ব নির্ধারিত হয়, যা সংগঠনটির প্রতি সাধারণ সদস্যদের আস্থা ও জবাবদিহিতার ভিত্তি স্থাপন করেছে।
বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত জমকালো দ্বিবার্ষিক সম্মেলন: এক খণ্ড বাংলাদেশ
সেই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতায়, গত ২১শে সেপ্টেম্বর, রবিবার যুক্তরাজ্যের হিসেবে পরিচিত বার্মিংহাম শহরের সুবিখ্যাত ইকবাল ব্যাঙ্কুয়েটিং হলে জিএসসির দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য দিনটি ছিল কেবল একটি প্রাতিষ্ঠানিক সভা নয়, বরং শেকড়ের টানে একত্রিত হওয়ার এক মিলনমেলা। লন্ডন, ম্যানচেস্টার, ব্র্যাডফোর্ড, ওল্ডহাম, স্কটল্যান্ডসহ যুক্তরাজ্যের ১২টি রিজিয়নের ১৪টি শাখা থেকে শত শত সদস্যের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বিশাল হলরুমটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। তাদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি, আন্তরিক আলাপচারিতা এবং উৎসবমুখর পরিবেশ প্রমাণ করে যে, জিএসসি প্রবাসীদের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।
সভার কার্যক্রম: স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার প্রতিফলন
সভার কার্যক্রম শুরু হয় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত এবং বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে, যা সংগঠনটির দ্বৈত সাংস্কৃতিক পরিচয়কে সম্মান প্রদর্শন করে। প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিদায়ী সভাপতি, কমিউনিটির শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার আতাউর রহমান এবং অনুষ্ঠানটি দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন খছরু খান। এই পর্বে সংগঠনের বিগত দুই বছরের কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ এবং স্বচ্ছ আর্থিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ ও নবনির্বাচিত সভাপতি সালেহ আহমদ। তাঁর উপস্থাপিত প্রতিবেদনে সংগঠনটির সাফল্য, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা ফুটে ওঠে, যা উপস্থিত সদস্যদের মাঝে ব্যাপক সমাদৃত হয় এবং তারা বিগত কমিটির কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সভার দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে প্রতীক্ষিত পর্বে নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যারিস্টার আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন এই গুরুদায়িত্ব পালন করে। কমিশনের অন্য সদস্যরা ছিলেন কাউন্সিলর সদরুজ্জামান খান ও আব্দুল রশিদ। কোনো রকম বিতর্ক ছাড়াই, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আগামী দুই বছরের জন্য গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে-এর নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি হিসেবে সালেহ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফিরোজ খান এবং কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আরজু খান এমবিই-এর নাম ঘোষণার সাথে সাথেই হলরুমে উপস্থিত সদস্যরা বিপুল করতালির মাধ্যমে তাদের স্বাগত জানান এবং নতুন নেতৃত্বের প্রতি তাদের অটুট আস্থা প্রকাশ করেন।
নতুন কমিটির কাছে সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রত্যাশা
এই নতুন এবং অভিজ্ঞ কমিটির কাছে প্রবাসী সম্প্রদায়ের প্রত্যাশা অনেক। সালেহ আহমদের মতো একজন বিচক্ষণ এবং কমিউনিটিতে সুপরিচিত ব্যক্তিত্বের নেতৃত্বে সংগঠনটি আরও বহুদূর এগিয়ে যাবে বলে সকলে আশাবাদী। কমিউনিটির সদস্যরা আশা করেন, নতুন নেতৃত্ব যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির অধিকার রক্ষা, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের জন্য ক্যারিয়ার ও সাংস্কৃতিক সুযোগ তৈরি এবং বাংলাদেশের, বিশেষ করে সিলেটের উন্নয়নে তাদের গৃহীত প্রকল্পগুলো আরও সফলভাবে বাস্তবায়ন করবে। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডাক্তার আবুল হাশিম, জিএসসির সাবেক সভাপতি মনসব আলি জেপি, কাউন্সিলর জিয়াউল ইসলাম, মির্জা আছহাব বেগ, ইনামুর রহমানসহ কমিউনিটির বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, যারা নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানান এবং তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
উপসংহার: নতুন দিনের সূচনা
শেষ পর্যন্ত, জিএসসির এই দ্বিবার্ষিক সম্মেলন কেবল একটি নেতৃত্ব পরিবর্তনই ছিল না, বরং এটি ছিল প্রবাসে এক খণ্ড বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি যেখানে গণতন্ত্র, ঐক্য এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধই মূল চালিকাশক্তি। নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে সংগঠনটি भविष्यতে আরও শক্তিশালী হবে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এই বিশ্বাস এবং উজ্জ্বল প্রত্যাশা নিয়েই সকলে সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন।
