গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ। সোমবার নিউইয়র্কে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা ও মোনাকো একযোগে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর ফলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের তালিকায় নতুন মাত্রা যোগ হলো।
১৯৮৮ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) নেতা ইয়াসির আরাফাত একতরফাভাবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেন। তখন থেকেই বিশ্বজুড়ে দেশগুলো ধাপে ধাপে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।
কারা স্বীকৃতি দিয়েছে
এএফপির তথ্য অনুযায়ী, জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে অন্তত ১৫১টি রাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
- ইউরোপ: সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা, অ্যান্ডোরা, মোনাকো, নরওয়ে, স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়া যুক্ত হয়েছে। এর আগে ২০১৪ সালে সুইডেন স্বীকৃতি দিয়েছিল।
- এশিয়া: ভারত, চীনসহ বেশিরভাগ দেশ ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে।
- আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা: অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
- প্রথম স্বীকৃতি: ১৯৮৮ সালে স্বাধীনতার ঘোষণার কয়েক মিনিট পর আলজেরিয়া প্রথম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হলে আরও ১৯টি দেশ নতুন করে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়।
কারা স্বীকৃতি দেয়নি
এখনও অন্তত ৩৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
- মধ্যপ্রাচ্য: ইসরাইল নিজেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে।
- পশ্চিমা দেশ: যুক্তরাষ্ট্র ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্ররা, বিশেষ করে জার্মানি ও ইতালি, এখনও স্বীকৃতি দেয়নি।
- এশিয়া: জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর এই তালিকায় রয়েছে।
- আফ্রিকা ও ওশেনিয়া: ক্যামেরুন, পানামা এবং ওশেনিয়ার বেশিরভাগ দেশও স্বীকৃতি দেয়নি।
কেন স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ
আন্তর্জাতিক আইনের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বীকৃতি মানে এই নয় যে কোনো রাষ্ট্র বাস্তবে গঠিত হয়ে গেছে। আবার স্বীকৃতি না থাকলেও রাষ্ট্রের অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না। তবে এর রাজনৈতিক ও প্রতীকী গুরুত্ব বিশাল।
ফ্রান্সের এইক্স-মার্সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোমেন লে বোয়েফ বলেন, “ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক আইনের সবচেয়ে জটিল প্রশ্নগুলোর একটি। এটি রাজনৈতিক ও আইনি বিষয়ের মাঝামাঝি অবস্থান।”
ব্রিটিশ-ফরাসি আইনজীবী ফিলিপ স্যান্ডসের ভাষায়, “এটি অনেকের কাছে প্রতীকী মনে হলেও, বাস্তবে প্রতীকী গুরুত্বই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনে। একবার রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেলে ফিলিস্তিন আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইসরাইলের সমান মর্যাদা পায়।”
জাতিসংঘের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তাদের মিত্ররা এখনো কঠোর অবস্থানে আছে। তবে ইউরোপের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মোড় এনেছে, যা ভবিষ্যতের আলোচনায় বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
