এবার দূতাবাসের বাইরে ফিলিস্তিনের পতাকা ওড়ালো যুক্তরাজ্য
আন্তর্জাতিক
, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার একদিন পর, লন্ডনের দূতাবাসের বাইরে ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এটি ব্রিটেনের ঐতিহাসিক এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রতীক।
ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন: ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সমর্থন
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হুসাম জোমলট বক্তৃতা দেন, এরপরই ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। তিনি বলেন, “আমাদের জাতির পতাকা উত্তোলন করতে এসে আমি গর্বিত। এর রঙ আমাদের জাতির ইতিহাস এবং পরিচয়ের প্রতীক। কালো আমাদের শোকের জন্য, সাদা আমাদের আশার জন্য, সবুজ আমাদের ভূমির জন্য এবং লাল আমাদের জনগণের ত্যাগের জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির অর্থ হচ্ছে, একটি ঐতিহাসিক ভুল সংশোধন করা এবং স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং মৌলিক মানবাধিকারের জন্য একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি।”
ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি আক্রমণ: জোমলটের বক্তব্য
জোমলট জনগণকে মনে করিয়ে দেন যে, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “গাজায় আমাদের জনগণকে বোমা হামলায় হত্যা করা হচ্ছে, তাদের বাড়ি ধ্বংস করা হচ্ছে, এবং পশ্চিম তীরে আমাদের জনগণকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার চেষ্টা চলছে।”
এছাড়া, তিনি আরো যোগ করেন, “এটি একটি গণহত্যা যা এখনো অস্বীকার করা হচ্ছে এবং দায়মুক্তির সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র স্বীকৃতি
গত রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনের জাতিগত অধিকার এবং স্বাধীনতা সমর্থন করেছে। এটি ব্রিটেনের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রের স্বীকৃতির মানে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব
ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে একটি বড় পদক্ষেপ, যা দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীজুড়ে ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে একটি কল্পনা ছিল। অনেক বছর ধরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছিল। যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সমাজে একটি ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর কাছেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছে।
জবাবদিহিতা এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান
ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য এই পদক্ষেপ এক ধরনের মনোবল সৃষ্টিকারী প্রমাণ। অনেক বছর ধরে তারা যুদ্ধ, নিপীড়ন এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের জন্য এই রাষ্ট্রের স্বীকৃতি শুধু একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি মানবাধিকার এবং মর্যাদার একটি সশক্ত প্রমাণ। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা আশা করতে পারেন যে, তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত এবং ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলবে।
উপসংহার: যুক্তরাজ্যের ভূমিকা এবং ভবিষ্যত দিকনির্দেশনা
এখন, ফিলিস্তিনের পতাকা উত্তোলন এবং রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির পর, যুক্তরাজ্য এক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এটি বিশ্বের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠাচ্ছে, যেখানে মানবাধিকার, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা প্রাধান্য পাচ্ছে। ব্রিটেনের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক রাজনীতির আরও সুষ্ঠু ও ন্যায্য দিকনির্দেশনায় ভূমিকা রাখবে, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়া এবং ফিলিস্তিনির স্বাধীনতার দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে।
