শারদোৎসবের মুখে বাঙালির সবচেয়ে বড় প্রশ্ন— এ বার কি পদ্মার ইলিশের স্বাদ মিলবে? বাংলাদেশ থেকে রফতানির অনুমতি মিললেও বরাদ্দ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় কলকাতা ও জেলার মাছপ্রেমীরা দুশ্চিন্তায়।
অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার মৌখিকভাবে ৩,০০০ টন ইলিশ রফতানির আশ্বাস দিলেও, শেষ পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়েছে মাত্র ১,২০০ টনের। গত বছরও প্রথমে অনুমোদন দেওয়া হলেও পরে তা কমিয়ে পাঠানো হয়েছিল।
ফলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, বাজারে দামের আগুন জ্বলবেই। কলকাতার এক পাইকারি ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ৩,০০০ টন ইলিশের প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু বরাদ্দ অনেক কম। এতে খুচরা বাজারে ক্রেতার পকেটে চাপ বাড়বেই।”
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগে এ বছর ইলিশ শিকার জুন-জুলাইয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে ঘাটতি থাকায় রফতানির কোটা সীমিত করা হয়েছে। ফলে গত বছর যে ইলিশের দাম ছিল কেজিপ্রতি ১,৬০০–২,০০০ টাকা, এ বছর তা ছাড়িয়ে যেতে পারে ২,৫০০ টাকাও। ইতিমধ্যেই কলকাতার বড় বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।
বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলেও জোগান কম। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও হাওড়ায় ইলিশ শিকার গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫–৪০ শতাংশ কমেছে। যদিও গুজরাত থেকে আসা প্রায় ৪,৫০০ টন ইলিশে কিছুটা চাপ কমেছে, কিন্তু বাঙালির আবেগের সঙ্গে জড়ানো ‘পদ্মার ইলিশ’-এর অভাব পূরণ হয়নি।
শেখ হাসিনার আমলে দুর্গাপূজোর আগে ইলিশ রফতানি একপ্রকার কূটনৈতিক বার্তা হয়ে উঠেছিল। সেই ‘ইলিশ কূটনীতি’ বন্ধ হয়ে ইউনূস সরকারের নীতিতে এসেছে পরিবর্তন। প্রথমে রফতানি পুরোপুরি বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হলেও পরে সীমিত অনুমতি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় রফতানি নীতিতে শর্তসাপেক্ষে ইলিশ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ধারাবাহিকতায় টান পড়েছে। ইউনূস সরকার দাবি করছে, ইলিশের মতো ইস্যু দুই দেশের সম্পর্কের উপর বড় প্রভাব ফেলবে না। তবে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে এর প্রভাব তীব্র, বিশেষত ভাদ্র সংক্রান্তি ও দুর্গাপূজোর আগে।
১,২০০ টন ইলিশ কবে পৌঁছবে, দাম কত দাঁড়াবে— তা নিয়েই এখন সবার দৃষ্টি। তবে প্রায় নিশ্চিত, এ বার পুজোয় ইলিশের স্বাদ নিতে গেলে সাধারণ ক্রেতাকে গুনতে হবে বাড়তি টাকা। উৎসবের আনন্দে তাই পকেটের চাপ বাড়তে বাধ্য।
