পায়জামার মর্যাদা রক্ষায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ: শামসুন্নাহার হলের ছাদ পরিণত হলো রণক্ষেত্রে, আলোচনার কেন্দ্রে লাল টুল!
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, NRD NEWS ঢাকা প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | সময়: বিকাল ৪:৩০
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ছাদ আজ এক ঐতিহাসিক রণাঙ্গনের সাক্ষী হলো। যেখানে প্রতিপক্ষের হামলায় পরাস্ত হয়েছে মানবিকতা, ভূলুণ্ঠিত হয়েছে সম্প্রীতির পতাকা এবং বিজয়ী হয়েছে একটি লাল রঙের প্লাস্টিকের টুল। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তুচ্ছ একটি পায়জামা শুকানোর স্থান দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রীদের দুটি গ্রুপের মধ্যে যে তুলকালাম কাণ্ড ও রক্তক্ষয়ী (কল্পনীয়) সংঘর্ষ ঘটেছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত আজ দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হলের আবাসিক ছাত্রী এবং ‘ছাদ-সার্বভৌমত্ব জোটের’ নেত্রী হিসেবে পরিচিত রোকসানা আক্তার (ছদ্মনাম) তার গত ঈদে কেনা অতিপ্রিয় পোলকা ডটের পায়জামাটি ধুয়ে ছাদে শুকাতে দেন। ছাদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের এই স্থানটি রোদ ও বাতাস চলাচলের জন্য ‘প্রাইম লোকেশন’ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বিপত্তি ঘটে মিনিট পনেরো পরেই। ‘দখলদার প্রতিরোধ মঞ্চের’ এক সদস্যা, পারভীন সুলতানা (ছদ্মনাম), সেই পায়জামাটিকে কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই একপাশে সরিয়ে রেখে নিজের ভারি জিন্স প্যান্ট মেলে দেন।
এই ঘটনাকেই ‘পায়জামার সার্বভৌমত্বের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেন রোকসানা। তিনি পারভীনের নিকট এর কারণ জানতে চাইলে দুজনের মধ্যে তীব্র বাক্য বিনিময় শুরু হয়। জানা যায়, তাদের কথোপকথন ছিল অনেকটা এরকম:
“এই আপু, আমার পায়জামাটা সরালেন কেন? দেখছেন না ভেজা?” “ছাদটা তো আপনার নামে লিখে দেওয়া হয়নি। যেখানে জায়গা পেয়েছি, সেখানেই দিয়েছি।” “আমার পায়জামার এক সুতার অপমানও সহ্য করা হবে না। এখনই আপনার জিন্স সরান!” “এক ইঞ্চিও সরবে না। পারলে কিছু করে দেখান।”
এই ‘করে দেখানোর’ আহ্বানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মুহূর্তের মধ্যে দুই নেত্রীর সমর্থকেরা ছাদে সমবেত হন এবং নিজ নিজ পক্ষের সমর্থনে স্লোগান দিতে শুরু করেন। কথা-কাটাকাটি এক পর্যায়ে হাতাহাতি এবং চুলোচুলিতে রূপ নেয়।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতেই আবির্ভূত হয় এই দিনের প্রধান চরিত্র—একটি উজ্জ্বল লাল রঙের প্লাস্টিকের টুল। সংঘর্ষ যখন মধ্যগগনে, তখন ‘দখলদার প্রতিরোধ মঞ্চের’ এক উত্তেজিত সদস্যা নিকটেই থাকা টুলটিকে তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে তেড়ে যান। এই ‘অপ্রচলিত অস্ত্রের’ আকস্মিক আবির্ভাবে প্রতিপক্ষের সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ আত্মরক্ষার্থে বালতি ও মগ হাতে তুলে নিলেও লাল টুলের আগ্রাসনের সামনে তা ছিল একেবারেই নস্যি। টুলের আঘাতে পায়জামার মালিক রোকসানার হাত থেকে তার মোবাইল ফোনটি ছিটকে পড়ে বলেও জানা যায়।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে হলের এক সাধারণ ছাত্রী, যিনি ঘটনার সময় নিজের গামছা শুকাতে গিয়েছিলেন, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলেন, “আমি তো শুধু আমার গামছাটা শুকাতে এসেছিলাম। এসে দেখি এলাহী কাণ্ড! কে কাকে মারছে, কেন মারছে, কিছুই বুঝিনি। শুধু দেখলাম একটা লাল টুল এদিক-ওদিক উড়ছে। আমি কোনোমতে গামছা হাতে নিয়ে দৌড়ে রুমে চলে এসেছি। আমার গামছাটা এখনও ভেজা।”
এই ঘটনায় কোনো ছাত্রীর গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ‘আহত’ হয়েছে সেই পোলকা ডটের পায়জামাটি, যেটি ধুলোয় গড়াগড়ি খেয়ে নিজের সম্মান হারিয়েছে। এছাড়াও, প্রধান অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত লাল টুলটির একটি পায়া সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘটনার পর হল প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হলের প্রাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, “এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও লজ্জাজনক ঘটনা। আমরা এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দোষীদের বিরুদ্ধে হল থেকে চিরতরে কাপড় শুকানো নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।”
আপাতত হলের ছাদে একটি থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা কমলেও ‘প্রাইম লোকেশনটি’ এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। তবে আজকের পর থেকে শামসুন্নাহার হলের ছাদে কাপড় শুকানোর আগে ছাত্রীরা যে একবার হলেও লাল টুলের কথা স্মরণ করবেন, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
