ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (ছাত্রদল) প্যানেলের ভরাডুবিতে বিস্মিত ও হতাশ বিএনপি। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, প্রতিপক্ষের কৌশল ও নিজেদের সমন্বয়হীনতার কারণে তারা ধরাশায়ী হয়েছেন।
গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শীর্ষ তিন পদসহ মোট ৯টি সম্পাদকীয় পদে জয়ী হয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। বাকি তিনটি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কোনো পদেই জয় পায়নি ছাত্রদল, বরং পরাজিত হয়েছে অনেক ভোটের ব্যবধানে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এমন ভরাডুবিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে বিএনপি। প্রকাশ্যে তেমন কিছু না বললেও আড়ালে কারণ খুঁজছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, “আমরা নির্বাচনের সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। বিশ্লেষণ শেষে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাবো।”
তবে দলের একাধিক নেতা জানান, ছাত্রদল প্রস্তুত ছিল না। ক্যাম্পাসের পরিবেশও তাদের পক্ষে অনুকূল ছিল না। আবার সংগঠনের অভ্যন্তরে সমন্বয়ের অভাবও ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ অবশ্য ফলাফল মেনে নিয়ে বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “এটাই গণতন্ত্রের রীতি।”
ছাত্রদলের নেতারা মনে করেন, ছাত্রশিবির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিচয় গোপন করে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছিল। ৫ আগস্টের পর তারা প্রকাশ্যে এসে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পক্ষান্তরে ছাত্রদল সংগঠন ও নেতৃত্বের দুর্বলতায় পিছিয়ে পড়ে।
দুর্বলতা ও সমন্বয়হীনতা
ছাত্রদল অন্যান্য সংগঠনের মতো পূর্বপ্রস্তুতি নিতে পারেনি। তপশিল ঘোষণার পর হঠাৎ করে প্যানেল গঠন করা হয়। শিক্ষকদের সঙ্গে সম্পর্ক, নারী ভোটার ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতেও ব্যর্থ হয় সংগঠনটি। অভ্যন্তরীণ বিভাজন ও কেন্দ্র থেকে নেতাকর্মীদের নিরুৎসাহিত করার কারণে অনেকেই কার্যত গুটিয়ে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতাকর্মীরাও এককভাবে কাজ করলেও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থাভাবও ছিল বড় বাধা।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও প্রশাসনিক অভিযোগ
অনেকে মনে করছেন, বিএনপি ও ছাত্রদলের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও তাদের পতনের কারণ। তারা ধরে নিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কখনোই ইসলামী সংগঠনকে ভোট দেবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই অঙ্ক ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
এ ছাড়া ছাত্রদলের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো জামায়াত-শিবির সমর্থিত হওয়ায় প্রতিপক্ষ বাড়তি সুবিধা পেয়েছে। ভোট কারচুপির অভিযোগও তারা তুলেছে।
শিক্ষকদের পাশে না পাওয়া
বিএনপিপন্থি সাদা দলের শিক্ষকদেরও কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে পারেনি ছাত্রদল। ফলে তাদের সমর্থন ভোটে কাজে লাগেনি।
সব মিলিয়ে ছাত্রশিবিরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ছাত্রদলের দুর্বল প্রস্তুতির কারণে ডাকসু নির্বাচনে বিএনপির এই বড় ধাক্কা এসেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
