অপরিশোধিত তেলের বাজারে সরবরাহ ও দামের অস্থিরতার মধ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রোববার সৌদি আরব, রাশিয়া ও ওপেক প্লাস জোটের আরও ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ (ভলান্টারি এইট বা ভি–৮) তেল উৎপাদন নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবে তা ঘিরে বৈশ্বিক বাজারে আলোচনার ঝড় বইছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈঠকে উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্ব পেতে পারে। কারণ আগামী মাসগুলোতে অতিরিক্ত সরবরাহের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৫–৭০ ডলারে নেমে এসেছে, যা এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ শতাংশ কম।
গত কয়েক বছরে দাম ধরে রাখতে ওপেক ও মিত্র দেশগুলো ধাপে ধাপে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লাখ ব্যারেল উৎপাদন কমায়। তবে এ বছরের এপ্রিলে সৌদি আরব, রাশিয়া, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাজাখস্তান, আলজেরিয়া ও ওমান—এই ভি–৮ দেশগুলো বাজারের অংশীদারিত্ব পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে উৎপাদন বৃদ্ধির পথে হাঁটে।
রিস্ট্যাড এনার্জির বিশ্লেষক হোর্হে লেওনের মতে, বছরের শেষ প্রান্তিকে সাধারণত তেলের চাহিদা কিছুটা কমে যায়। ফলে উৎপাদন না বাড়ালেও বাজারে উদ্বৃত্ত সরবরাহের কারণে দামের ওপর চাপ অব্যাহত থাকবে। স্যাক্সো ব্যাংকের বিশ্লেষক ওলে হ্যানসেন বলেন, গুঞ্জন রয়েছে যে গ্রুপটি অক্টোবরের জন্য কোটা সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
অন্যদিকে গ্লোবাল রিস্ক ম্যানেজমেন্টের আরনে লোহমান রাসমুসেন মনে করেন, ওপেকের নিজস্ব বিশ্লেষণও বলছে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের জায়গা রয়েছে। এ কারণে ২০২৩ সালের বসন্তে সম্মত অতিরিক্ত উৎপাদন হ্রাস পুনর্বহালের কথাও আলোচনায় আসতে পারে।
এ সময় বৈঠকের আরেকটি বড় প্রেক্ষাপট হলো ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে, আর যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি রাশিয়া ও তার তেল ক্রেতাদের টার্গেট করেছেন। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোকে রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং রাশিয়াকে সমর্থন করার অভিযোগে চীনের ওপরও অর্থনৈতিক চাপ দেওয়ার কথা বলেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার রপ্তানি সীমিত হলে ওপেক প্লাস দেশগুলোর জন্য বাজারে নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে সৌদি আরবের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক রাশিয়ার জন্য কোটার সুবিধা কাজে লাগানো কঠিন হবে, কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ চালাতে তাদের উচ্চ তেলের দামের প্রয়োজন রয়েছে।
সব মিলিয়ে, উৎপাদন বাড়ানো না কমানো—কোন পথে হাঁটবে ওপেক প্লাস—তা নির্ধারণ করবে আগামী মাসগুলোর বৈশ্বিক তেলবাজারের গতি।
