আফগানিস্তানে সোমবার ভোরে আঘাত হানা এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং আড়াই হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে অসংখ্য কাঁচা বাড়িঘর ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে তালেবান কর্তৃপক্ষ।
মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, ৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পে ১২ লক্ষেরও বেশি মানুষ কম্পন অনুভব করেছেন। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কুনার প্রদেশ, যেখানে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তালেবান সরকারের প্রধান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, শুধুমাত্র কুনার প্রদেশেই ৮০০ জন নিহত ও ২৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। পার্শ্ববর্তী নানগাহার প্রদেশেও ১২ জন নিহত ও ২৫৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল মতিন এএফপিকে বলেন, “ব্যাপক সংখ্যক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।” ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি আফটারশক অনুভূত হওয়ায় উদ্ধার অভিযান আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক গ্রামে প্রবেশ করা এখনো কঠিন হয়ে আছে।
ভূমিকম্পের পর পাকিস্তান ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা আফগানিস্তানের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, “এই শোকের মুহূর্তে আমরা আমাদের আফগান ভাইবোনদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি এবং সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত।”
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “আফগানিস্তানে জাতিসংঘের দল তৎপর এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অভাবীদের সহায়তা করার জন্য কোনো ত্রুটি থাকবে না।”
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুনে আফগানিস্তানে ৬.১ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ১,০০০-এরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। মূলত, হিন্দুকুশ পর্বতমালার কাছে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের মিলনস্থলের কারণে আফগানিস্তানে প্রায়ই এমন শক্তিশালী ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান ও ইরান থেকে ফেরা ৪০ লক্ষেরও বেশি আফগান নাগরিক এই ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকাগুলোতে বসবাস করছেন। এই বিপর্যয় দেশটির সীমিত সম্পদকে আরও চাপের মধ্যে ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
