ডেস্ক নিউজ ঃ
পশ্চিম আফ্রিকান দেশ নাইজারের দিকে এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখল দেশটিকে কোন দিকে নিয়ে যায়—তা নিয়ে চলছে হিসাবনিকাশ। ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো শেষ হয় নাই। অনেকে তাই নাইজার পরিস্থিতিকে ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন। এটি হয়ে উঠতে পারে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধের নতুন একটি ফ্রন্ট। পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলোর অর্থনৈতিক জোট (১৫টি দেশের সমম্বয়ে গঠিত) ইকোয়াস ইতিমধ্যেই দেশটিতে সংরক্ষিত সৈন্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আফ্রিকার দেশগুলোতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতাগ্রহণ নতুন কিছু নয়। সাবেক ফরাসি উপনিবেশ নাইজারেও সেনা অভ্যুত্থানের আলাদা কোনো তাত্পর্য ছিল না। কয়েকটি কারণে এই ঘটনা বাইরের দুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ নিয়ে রাশিয়া ও ফ্রান্স ইতিমধ্যেই অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে। ফ্রান্সের সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে লাইন আপ হতে পারে চীন ও তুরস্কের। নাইজার ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভ করলেও এই পর্যন্ত কেবল দুটো সরকারই ছিল জনগণের ভোটে নির্বাচিত। যার মধ্যে সর্বশেষ ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুম। ইকোয়াস তার কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার যে ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছিল তা ৬ আগস্ট পার হয়ে যায়। কিন্তু জান্তা প্রধানের দাবি মেনে নেওয়ার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বরং জনগণের মধ্যে ফরাসি বিরোধী তুঙ্গে থাকায় তার সুফল পাচ্ছে সামরিক সরকার।
এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ৭৫ শতাংশের ওপর মানুষ এখন ফ্রান্সবিরোধী। সাধারণ মানুষ মনে করে, বিদেশিরা আসে কেবল সম্পদ লুণ্ঠন করতে। নিকটবর্তী লিবিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে এটি পরিষ্কার। গোষ্ঠীসংঘাত থামাতে সেখানে পশ্চিমা দেশগুলো সৈন্য পাঠালেও তারা সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বা করেনি। তারা উলটো লিবিয়ার প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। নাইজারবাসী আশঙ্কা করছে, পশ্চিমা দেশগুলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তাদের খনিজ সম্পদ দখলে নিয়ে নিতে পারে।
জান্তা প্রধান জেনারেল আবদুররহমানে টিচিয়ানি এরই মধ্যে সাবেক সরকারের অর্থমন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদ আলী লামিনে জেইনকে প্রধান করে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। টিচিয়ানি ২৬ জুলাই নিজেকে প্রেসিডেন্ট বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত বাজুমের নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধান। নাইজারের জান্তা বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের সঙ্গে করা পাঁচটি সামরিক ও নিরাপত্তা চুক্তি বাতিল করে। ১৯৭৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চুক্তিগুলো করা হয়েছিল। পার্শ্ববর্তী মালি ও বুরকিনা ফাসোতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পরও একই পদক্ষেপ নিয়েছিল। ঐ দুটি দেশ থেকে ফরাসি সৈন্যদেরও বিতাড়িত করা হয়েছে। তবে নাইজারে এখনো এক থেকে দেড় হাজার ফরাসি সৈন্য রয়ে গেছে। সাহারা ও সাবসাহারান অঞ্চলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের জন্য কয়েক বছর আগে ফ্রান্স ঐ দেশগুলোতে সৈন্য পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স নাইজারের নতুন শাসককে স্বীকৃতি দেয়নি। ইইউ নাইজারের সঙ্গে নিরাপত্তা ও আর্থিক সহযোগিতা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে। আফ্রিকান ইউনিয়নও অনুরূপ পদক্ষেপ নিয়েছে।
সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে ক্রমেই শক্তি সঞ্চার করেছে বলে মনে হয়। কারণ, পশ্চিমাদের সৈন্য পাঠানোর হুমকি সাধারণ মানুষের জাতীয়তাবোধ উসকে দিয়েছে। তারা এইক্ষেত্রে জান্তার হাতই শক্তিশালী করেছে। অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পর রাজধানী নিয়ামিতে ১৫টি নাগরিক অধিকার সংগঠনের জোট এমসিক্সিটি টু মুভমেন্ট নাইজার ও রাশিয়ার পতাকা নিয়ে বিশাল শোভাযাত্রা করেছে। ফরাসি দূতাবাসের সামনে গিয়ে তারা ফ্রান্স নিপাত যাক ও পুতিন দীর্ঘজীবী হোক শ্লোগান দেয়। পার্লামেন্ট ভবনের সামনে গিয়ে তারা বলে, আমরা ইকোয়াস, আফ্রিকন ইউনিয়ন বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধার ধারি না। নিয়ামিতে অবশ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাজুমের পক্ষেও মিছিল হয়েছে।
নাইজার ছিল জঙ্গি গ্রুপ বোকো হারামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমাদের এক নির্ভরযোগ্য মিত্র। সেনা অভ্যুত্থানের ফলে পুরো পশ্চিম আফ্রিকায় তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। একই সঙ্গে আফ্রিকান ঐক্যও পড়েছে হুমকির মুখে। আফ্রিকার যেসব দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আছে সেই দেশগুলো স্বাভাবিকভাবে এখন নাইজারের পক্ষে যাবে না। দেশটিতে যদি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ বেধেই যায় তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। বহু মানুষ শরণার্থী হিসেবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নেবে। চরমপন্থি গ্রুপগুলো সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে তার সুযোগ নেবে। দেশটিতে এখনো যু্ক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের ২ হাজার ৫০০ সৈন্য আছে। ইকোওয়াসভুক্ত ১৫ দেশের মধ্যে নাইজার চতুর্থদেশ গত তিন বছরে যে দেশগুলোতে অভ্যুত্থান হয়েছে। ইকোওয়াস কোনো অভ্যুত্থান পরবর্তী সংকট সমাধানে সাফল্য দেখাতে পারেনি।











সত্যের সন্ধানে আমরা — NRD News Media Limited