অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলোর গতি বাড়ানোর উদ্যাগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ৫০টি প্রকল্পের অবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রকল্পগুলো নিয়ে আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হবে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এডিবি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের শীর্ষ কর্তকর্তাসহ প্রকল্প পরিচালকদের ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে প্রকল্পের ধীরগতির কারণ খুঁজে বের করে সমাধানের পথ তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে এডিবির অর্থায়নে মোট ৫০টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। এসব বাস্তবায়নে সংস্থাটির ঋণ দিচ্ছে সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু সব প্রকল্প সমান ভাবে এগোচ্ছে না।
কোনো কোনো প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়ন হলেও কাজ শেষ হচ্ছে না। ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা ধরনের জটিলতা বিরাজ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ট্রিপার্টিট পোর্টফোলিও রিভিউ মিটিংয়ের (টিপিআরএম) আয়োজন করা হয়েছে। বৈঠকে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত টিপিআরএমে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতিও খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে চলতি বছর অর্থছাড় বৃদ্ধি এবং প্রকল্পভিত্তিক টাইম বাউন্ড অ্যাকশন প্ল্যান চূড়ান্ত করা হবে।
এডিবির পক্ষ থেকেও কোনো জটিলতা থাকলে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা হবে। পুরো প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে প্রকল্পের গতি বাড়িয়ে অর্থছাড় বাড়ানোর একটি উদ্যোগ। এ ধরনের বৈঠক কার্যকর হয়ে থাকে। কারণ এখানে সব পক্ষই অংশ নেন।
যেসব প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডর রোড ইনভেস্টমেন্ট প্রজেক্ট এবং সাসেক ইন্টিগ্রেটেড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। এছাড়া রোলিং স্টক অপারেশন ইনভেস্টমেন্ট অব বাংলাদেশ রেলওয়ে, দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ, রেলওয়ে কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এবং কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট।
আরও আছে-ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট। আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্ট-২। থার্ড আরবান গভার্নেন্স ইনফ্রাসট্রাকচার ইমপ্রুভমেন্ট (এলজিইডি)। রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এবং রূপসা ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রজেক্ট।
সূত্র জানায়, ধীরগতির তালিকায় থাকা অন্যতম একটি প্রকল্প হচ্ছে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট)। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের প্রকল্পটিতে গত বছরের ১৫ আগস্ট গার্ডার ধসে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপত্তাঝুঁকিসহ ধীরগতির বিষয়টি সামনে চলে আসে গুরুত্বের সাথে। মূল অনুমোদিত প্রকল্পটি ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল।
বর্তমানে তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ১ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। ফলে চার বছরের এ প্রকল্পটি ১১ বছরে সমাপ্ত করা হবে। শুধু বাস্তবায়নে যে দেরি হয়েছে সেটিই নয়, এর সঙ্গে বারবার বেড়েছে ব্যয়ও।
প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২ হাজার ৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়ানো হয়নি। তবে দ্বিতীয় সংশোধনীর সময় প্রায় দ্বিগুণ ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা করা হয়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় সংশোধনীতে এসে সরকারি তহবিলের ১৫৩ কোটি ২০ লাখ টাকা কমিয়ে এর সমপরিমাণ বৈদেশিক ঋণ বাড়ানো হয়। ফলে মোট ব্যয় ঠিক রাখা হয়েছে।