ডেস্ক রিপোর্ট: একটি কারখানা থেকে জুস ও শিশুখাদ্যসহ ২৮ রকমের ভেজাল খাদ্যপণ্য জব্দ ও ধ্বংস করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
রাজধানীর ডেমরায় আল-ফালাক ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড কারখানায় অভিযান চালায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।এ সময় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
সোমবার (৮ মে) ডেমরার ডগাইর নতুন পাড়া সালামবাগ এলাকার ফ্রেন্ডশিপ অ্যাগ্রো ফার্মে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহযোগিতায় অভিযান চালায় বিএসটিআই। সংস্থাটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসিব সরকারের নেতৃত্বে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়।
আল-ফালাক ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ওই কারখানায় ২৮ রকমের ভেজাল জুস ও শিশুখাদ্য উৎপাদন করছিল। অভিযানের সময় বিএসটিআই কর্মকর্তারা কারখানার গেট খুলতে বললে ফ্রেন্ডশিপ অ্যাগ্রো ফার্মের লোকজন পালিয়ে যান। পরে ভেতরে প্রবেশ করে যত্রতত্র ফেলে রাখা বিভিন্ন ফ্লেভারের জুস পাওয়া যায়। এ সময় ফ্রুটু, ওয়ান স্টার ড্রিংকো, আইস পপ, শাহি লাচ্চিসহ শিশুখাদ্য জব্দ করা হয়।
বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক জিশান আহমেদ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা ফ্রুটু, ওয়ান স্টার ড্রিংকো, আইস পপ, ললিপপের মতো পণ্য এখানে উৎপাদন করছে। যার জন্য বিএসটিআইয়ের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
তবে আমাদের তালিকা অনুসারে, ফালাক ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড নামের এই কোম্পানির কোনো লাইসেন্স নেই। তারা অনেক দিন ধরেই ভেজাল ও ক্ষতিকর এসব শিশুপণ্য ও জুস তৈরি করে আসছে। আমরা খবর পেয়ে অভিযানে এসে সত্যতা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো কারখানাটি ঘুরে দেখেছি। তাদের ব্যবহৃত কাঁচামাল, কাজের পরিবেশ ও যে পরিবেশে উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করা হয়, তা পর্যালোচনা করে দেখেছি। আমাদের পর্যালোচনা বলছে, তারা যে ধরনের পণ্য এখানে উৎপাদন করছে, সেটির জন্য মাইক্রো বায়োলজিক্যাল ল্যাব এবং ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থাকা আবশ্যক। সেটি এখানে নেই। পাশাপাশি এখানে অনুমোদনবিহীন ফ্লেভার বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা খোলাবাজার থেকে কেনা রং ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন করছে। সেটিও অনুমোদনহীন এবং ফুডগ্রেড নয়।’
তা ছাড়া কারখানাটির উৎপাদিত পণ্যের কোনো উৎপাদন তারিখ বা কোথায় থেকে কাঁচামাল আমদানি করা হয়েছে, সেসব তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন জিশান আহমেদ তালুকদার।
তিনি বলেন, কারখানার কর্মীরা পালিয়ে যাওয়ায় পরে মালিকপক্ষকে ফোনে ডেকে এনে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কারখানার ভেতরে থাকা ভেজাল জুস ও পানীয় নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। ধ্বংস করা মালামালের আনুমানিক মূল্য ১০ লাখ টাকা। এরপর কারখানাটি সিলগালা করা হয়েছে। তবে কারখানার মালিকপক্ষকে নজরদারিতে রাখা হবে।
বাজার থেকে শিশুখাদ্যসহ যেকোনো পণ্য কেনার সময় ভোক্তাকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত বাজারের নামিদামি ব্র্যান্ডের নকল পণ্য বানাচ্ছিল কারখানাটি। আমরা বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে কিউআর কোড জেনারেট করেছি। ভোক্তারা যখন একটি পণ্য বাজার থেকে কিনবেন, তখন মোবাইলের স্ক্যানার দিয়ে বারকোড সার্চ করলে সেই পণ্যটির লাইসেন্স কারা ইস্যু করেছে বা আদৌ পণ্যটির লাইসেন্স আছে কি না, এসব তথ্যসহ অন্যান্য তথ্য পাওয়া যাবে।’
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জিশান আহমেদ বলেন, ‘পণ্যের মধ্যে বিএসটিআইয়ের লোগো আছে বলেই এটি নকল নয়, এমনটি নয়। কারণ, যেকোনো সময় তারা প্রিন্ট করে লোগো ব্যবহার করছে। কাজেই লোগো আছে বলেই এটি বিএসটিআই অনুমোদিত, তা বলার কোনো সুযোগ নেই। এখন ডিজিটাল যুগ, খোলাবাজার থেকে কেনার সময় অবশ্যই বারকোড স্ক্যান করে পণ্য কিনতে হবে।’
স্থানীয়রা জানান, গভীর রাতে কারখানা থেকে কাঁচামাল ও পণ্য বের করা হতো। বেশির ভাগ সময়ই কারখানাটির প্রধান গেট বন্ধ থাকত। তাই তারা বুঝতে পারেননি এখানে ভেজাল পণ্য উৎপাদন করা হতো। কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেও মনে করেন কেউ কেউ।
স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমরা এই জুস বা অন্যান্য পণ্য যখন সন্তানদের কিনে দিই, তখন অনেক সময় বাচ্চাদের ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়।’
অভিযান চলাকালে পাশের আরেকটি কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নুডলস তৈরি করতে দেখে সেটিও সিলগালা করে দেয়া হয়।