কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেল দেশের বৃহত্তম ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি ইউনিট গত ২৫ মে বন্ধ হয়ে যায়। অপর ইউনিটটি আজ সোমবার (৫ জুন) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে বন্ধ হয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্ল্যান্টের ম্যানেজার শাহ আব্দুল মাওলা।
এদিকে চলমান তাপদাহে সৃষ্ট তীব্র গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ে নাকাল জনজীবন। এরইমধ্যে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ লোডশেডিং হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সমগ্র বরিশাল ও খুলনা এবং ঢাকার কিছু অংশের জন্য বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য উৎস।
আগামী ২০-২৫ দিন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
জানা যায়, বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনা করে এবং ৫০ শতাংশ শেয়ার থাকা চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি) কয়লার টাকা দেয়। বিল পরিশোধ করে দেওয়ার ৬ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে অর্থ আদায় করে সিএমসি।
গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পিডিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে বিসিপিসিএল জানায়, ৬ মাসের বেশি বকেয়া থাকায় সিএমসি পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত কয়লা সরবরাহ বন্ধ থাকবে।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রর বিল বকেয়া ছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সময় মতো ডলার ছাড় করতে রাজি না হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। গত মাসে চীনা বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে বিপদে পড়ে পায়রা। তখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক তৎপর হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৫ মে থেকে পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করে। ওই বছরের ডিসেম্বরে প্ল্যান্টটির দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করে।
তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করলেও সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় দীর্ঘদিন একটি ইউনিট অলস বসে ছিল।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে যাওয়ার পর এবারই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রটি কয়লা সংকটের কারণে পুরোপুরি বন্ধ করতে হচ্ছে।