সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় বা প্রথারীতিমতে ১৪ই এপ্রিল-১৪৩০ বঙ্গাব্দ রোজ শুক্রবার পহেলা বৈশাখ পালন করে খুলনা আর্ট একাডেমি
৩০৮, শের-এ – বাংলা রোড,খুলনা। সকাল ৯ ঘটিকায় খুলনা আর্ট একাডেমির সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস উপস্থিত সকলকে ১৪৩০ বঙ্গাব্দের নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়। এবংঅনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য সকল অভিভাবকদের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন এবং উপস্থিত সকল অভিভাবকদের বলেন আপনারা শিশুুদের নিয়ে এ ধরনের সংস্কৃতি অঙ্গনে বিশেষ দিনে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য দেখালে তাদের জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে।এরপরে খালিশপুর শিল্পাঙ্গন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুইজন শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সঞ্জয় সাহা খুলনা আর্ট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের হাতে একটি একতারা উপহার তুলে দেন। তখন চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস একতারাটি হাতে নিয়ে সকলের সামনে অনুভূতি প্রকাশ করেন। আজ এই উপহার পেয়ে আমি অনেক আনন্দিত। যদিও আমি একতারা বাজাতে পারি না তবে এখন থেকে আমি বাজাবার চেষ্টা করব। আর যদি আজ আমাকে এক লক্ষ টাকার চেক ও তুলে দিত আমি এতটা খুশি হতাম না। আমি তোমাদের আশীর্বাদ করি তোমরা অনেক বড় হও। সবাই এই অনুভূতি শুনে করতালির মাধ্যমে পরিবেশটি আরো সুন্দর করে তোলেন। তারপর সকলের পরিচিতি পর্ব শুরু হয়। পরিচিতি পর্বের পর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য যা বাঙালিরা এক সময় দৈনন্দিন সংসারে ব্যবহার করতো সেই বিষয়গুলি নিয়ে প্রদর্শনী প্রদর্শন করে। উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীর হাতে এবং গালে রং দিয়ে আলপনা করে দেওয়া হয়। এতে নবীন শিক্ষার্থীরা খুব আনন্দ প্রকাশ করে।এখন ডিজিটালের দ্বারপ্রান্তে এসে অতীতের সকল স্মৃতি মুছে যায় ।আসলে আমাদের যে সকল বিষয়বলি দৈনন্দিন কাজে প্রয়োজন হয়ে থাকে তা আমরা নিচে বিস্তারিত তুলে ধরছি। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যঃ হারিকেন, পিতলের ল্যাম্প, কাঁচের ল্যাম্প, এগুলো গ্রামের আধার দূর করতো ।এই হারিকেন এবং ল্যাম্প এর মাধ্যমে গ্রামের মানুষরা পড়াশোনা করতেন এবং রাতের আঁধারকে দূর করতেন ।আজ নবীনদের কাছে এটি একটি অপরিচিত বিষয়।চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের পিতার ব্যবহৃত পিতলের হুক্কা ও পিতলের ঘটি,এনালগ টেলিফোন,চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের ব্যবহৃত বিষয়। এবং সংরক্ষণ করা অসংখ্য বিষয় যেমন পিতলের বদনা, গ্লাস,নারকেলের হুক্কা, কাঠের বিন বাশি, প্লাস্টিকের সাপ,তেল মাপা লিটার, সোলার তৈরি সারস পাখি, রাজকীয় মাটির তৈরি হাতি,ঘোড়া, মাটির পুতুল, মাটির সরা, মাটির প্রদীপ,লাউয়ের খোলস, বৈঠা, জোকার, বিভিন্ন ধরনের একতারার ভিতরে লালন, ঢেঁকি, কাঠের ঘর, কাঠের তৈরি গরু, হরিণের মাথা, গণেশের মাথা, মহিষের মাথা, বাঘের মাথা, হারিয়ে যাওয়া রেডিও, একতারা, বেতের তৈরি সের,গরুর শিংএর তৈরি কলমদানি, মাটির হাড়ি, কাঠের তৈরি লাটিম, মাছ ধরার পোলো, মাছ রাখা খাড়া, কৃষি কাজের বিভিন্ন সরঞ্জাম, বাঁশের মাথাল, পাটের ছিকা,বাবুই পাখির বাসা,দরবেশ বাবা,হাতির মাথা সবাই ঘুরে ঘুরে দেখেন । তারপরে শুরু হয় দলীয় ভাবে বৈশাখের গান,সামিয়া জামান রোজ একটি একক গান পরিবেশন করে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গীত শিল্পী সঞ্জয় সাহার নেতৃত্বে।তারপরে শুরু হয় প্রতিষ্ঠানের আবৃতি শিক্ষিকা অনামিকা সাহা তিন্নির নেতৃত্বে তার সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে সুন্দরভাবে বেশ কিছু আবৃতি শোনায় আমাদের শিশু শিল্পীরা। এ সময় উপস্থিত অতিথি লিখিতভাবে মন্তব্য করেন। ছোট্ট পরিসরে হলেও তাদের দেখা সুন্দর একটি প্রতিষ্ঠান আখ্যায়িত করেছেন।আবার কেউ বলেছেন আমার দেখা খুলনা আর্ট একাডেমি সাংস্কৃতিক জগতের একটি শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। তখন খুলনা আর্ট একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস সকলকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানায়। এবং এই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মিলন বিশ্বাসের পহেলা বৈশাখ উপরে লেখা দৈনিক জন্মভূমি এবং দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন, ঢাকার আজকালের আলো সহ বেশ কিছু পত্রিকায় বৈশাখের একটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়। বৈশাখের উপরে দুইটি গান প্রকাশ পায়। সেই গান দুটি সুর করেন বাংলাদেশ বেতার বরিশালের স্বনামধন্য সুরকার ও শিল্পী গ্রীন তালুকদার। এবং বাগেরহাটের সংগীত শিল্পী প্রবীর শীল। সেই গান দুটি কম্পিউটারে বাজানো হয়। তখন ছোট্ট শিশু শিল্পী টিয়ানা গানের তালে তালে নৃত্য করে সবাইকে আনন্দ দেয়। বাংলাদেশের প্রতিটি সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং আর্ট কলেজ এখানে যারা পড়াশোনা করেন তাদের একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। আমরা একটু ভিন্নভাবেই পরিচালনা করার চেষ্টা করলাম।আমাদের উপস্থিত যত শিক্ষার্থী ছিলেন তারা সকলে মিলে একটি দলীয় সংগীত পরিবেশন করে। খালিশপুর শিল্পাঙ্গন প্রতিষ্ঠানের দুইজন শিশু শিল্পী একক গান পরিবেশন করে।আবৃতির ক্ষেত্রে আমরা একই ভাবে পরিচালনা করি। এবং উপস্থিত খুলনা আর্ট একাডেমির সিনিয়র সদস্য বাবু সন্দীপ কুমার ঘোষ পহেলা বৈশাখের উপরে নিজের লেখা আবৃত্তি করে শুনান।জিৎ মন্ডল বৈশাখের উপরে নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন। প্রতিষ্ঠানের আবৃতি শিক্ষিকা অনামিকা সাহা তিন্নি একটি একক আবৃত্তি করেন। এবং শিশু শিল্পী সৌহার্দ্য বিশ্বাস,সম্প্রীতি বিশ্বাস, অর্ঘ্য সরকার,তোয়া, টিয়ানা, জাহিন সবাই এক এক করে আবৃত্তি করেন।তখন আমাদের সংগীত শিক্ষক এবং উপস্থিত বিশিষ্টজনরা খুলনা আর্ট একাডেমির কার্যক্রম দেখে সবাই মন থেকে শুভ কামনা করছেন। আমাদের সকল শিক্ষার্থীদেরকে নিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করলাম এবং যে সকল শিশু শিল্পীরা একাডেমির আঙ্গিনায় এসেছে তাদের প্রত্যেকের হাতে ছোট্ট একটি চিনামাটি প্লেট উপহার দেই এবং উপস্থিত সকলকে মিষ্টিমুখ করানো হয়।সব মিলিয়ে একটি আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ৩৬৫ দিনে একটা বছর হয়, তার মধ্যে আমরা এই দিনটি বিশেষ ভাবে পালন করি। তখন যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন সংগীত শিক্ষক সঞ্জয় সাহা, আবৃত্তি শিক্ষক অনামিকা সাহা তিন্নি, এবং অভিভাবকবৃন্দ হলেন এডভোকেট ইমাম হোসেন, বঙ্গকথার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শেখ মোঃ আজগর হোসেন ,সন্দীপ কুমার ঘোষ,খুলনা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোঃ শাহিন হোসেন,ফিলিপ আরিন্দা, মিতা রানী সাহা, খুলনা মেডিকেলের সেবিকা নুসরাত জাহান, মোঃ আসাদুজ্জামান তালুকদার, প্রতিভা রায় প্রভাষক জীববিজ্ঞান,লাকী আক্তার, প্রিয়াঙ্কা সাহা, ডা. প্রদীপ কুমার,পরিমল বৈরাগী, অনুপ সরকার, জিৎ মণ্ডল, লিটন মন্ডল,শিক্ষার্থীরা হলো পার্থ হালদার, সৌহার্দ্য বিশ্বাস, সম্প্রীতি বিশ্বাস, নিশাত জাহান তথাপি, প্রাপ্তি সাহা, আয়েশা জেরিন, মৌমিতা মিস্ত্রি, অর্ঘ্য সরকার, মাশরাফি করিম তোয়া, জাফরিন আফরোজ, সোফিয়া রাসেল নাবিহা, নামিরা ইসলাম, জান্নাতুল ফেরদৌস, জাহিন, নাজেরা আমরিন টিয়ানা, কৃতিকা রোজলিন আরিন্দা, প্রিয়ন্তী সাহা, রাজিয়া খাতুন, ইসরাত জাহান জান্নাতি, ইসরাত জাহান রোজা, সান্তনা মন্ডল, সাহেলা, ইসরাত জাহান উপমা, মোঃ সাইফি, শায়ক প্রমুখ।বৈশাখের অনুষ্ঠানটি চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করা হয়। পরিচালনা করতে সহযোগিতা করেন সহকারী পরিচালক শিলা বিশ্বাস এবং চারুকলা ভর্তি কোচিং এর ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জয়া বৈরাগী, স্মৃতিকণা মন্ডল, ফাল্গুনী সরদার,সম্পা মুনী। এবং সকলের প্রচেষ্টায় খুব সুন্দর একটি দিন অতিবাহিত হয়। বিকাল ৪ টার সময় খুলনার অতি জনপ্রিয় সমাজসেবক ও
কে এইচ ফাউন্ডেশন এর পরিচালক শাহীন হোসেন এসে প্রদর্শনী পরিদর্শন করে তার অনুভূতি বক্তব্য জানায়। এবং চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাসকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানায় এরকম একটি সুন্দর আয়োজন করার জন্য। তারপর সেখানেই ১৪৩০ বঙ্গাব্দের অনুষ্ঠানটি সমাপ্তি ঘোষণা করেন চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস।