কর্মব্যস্ততার কারণে প্রতিদিন বাজারে যাওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে অনেকেই একসঙ্গে অনেক বাজার এনে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখেন। পরবর্তীকালে প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রিজ থেকে বের করে ব্যবহার করেন। এককথায়, ফ্রিজ আমাদের দৈনন্দিন জীবন অনেকটাই সহজ করেছে। কিন্তু যেকোনো খাবার ফ্রিজে রাখলেই ভালো থাকবে এটা একটা ভুল ধারণা। তাই হাতের কাছে যা মিলবে, সেটাই দুম করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিলে বোকামি ছাড়া কিছু হবে না। কারণ কিছু খাবার আছে যেগুলো ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে ভালো তো থাকবেই না, উল্টো পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো ফ্রিজে রাখা একদমই অনুচিত। এতে খাদ্যগুণ নষ্ট হয়ে যায়। চলুন জেনে নিই এমন কিছু খাবারের কথা-
আলু : ঠান্ডা তাপমাত্রায় আলুর স্টার্চ শর্করা বা চিনিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে ফ্রিজে রাখা আলু খেতে তুলনামূলক মিষ্টি লাগে এবং এটি অস্বাস্থ্যকরও। ৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় (৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) আলু সবচেয়ে ভালো থাকে। একটি কাগজের ব্যাগে ঢুকিয়ে মোটামুটি ঠান্ডা কোনো রুমে আলু সংরক্ষণ করা যেতে পারে। আলুতে যাতে সূর্যের আলো না লাগে। সূর্যের আলো পড়লে আলুতে ক্লোরোফিল জমা হয় এবং খেতে বিস্বাদ লাগে।
শসা : শসা ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। ফ্রিজে রাখলে এর তাজা ভাব নষ্ট হয়। রাখলেও ফ্রিজের সবচেয়ে উষ্ণ জায়গায় রাখা উচিত। শসার কচকচে ভাব ধরে রাখার জন্য ভিনেগার দিয়ে ধুয়ে কোনো বক্সের মধ্যে চুবিয়ে ঢাকনা দিয়ে ফ্রিজে রাখা যেতে পারে। এতে কচকচে ভাবটা অন্তত এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে।
পেঁয়াজ : পেঁয়াজ সতেজ থাকার জন্য পর্যাপ্ত বায়ু সঞ্চালন প্রয়োজন। ফ্রিজে যেহেতু উন্মুক্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই, তাই পেঁয়াজ ফ্রিজে না রাখাই ভালো। বরং কোনো ঠান্ডা রুমে মেঝেতে ছড়িয়ে রাখা যেতে পারে কিংবা ছিদ্রযুক্ত ব্যাগ বা পাতিলে ভরে রাখা যেতে পারে। পেঁয়াজ ও আলু কখনো পাশাপাশি রাখবেন না। পেঁয়াজ আর্দ্রতা ও গ্যাসনিঃসরণ করে, যার ফলে আলু দ্রুত পচে যেতে পারে। তবে কাটা পেঁয়াজ বায়ুরোধক বক্সে করে ফ্রিজে রাখতে পারেন।
টমেটো : বেশি ঠান্ডা পরিবেশে রাখলে টমেটোতে থাকা রাসায়নিক উপাদানগুলোতে পরিবর্তন আসে। ফলে সবজিটির তাজা ভাব চলে যায়। ফ্রিজে রাখলে টমেটো নরম হয়ে যেতে পারে। তাই স্বাদ ঠিক রাখতে চাইলে এ সবজিটি বাইরে কোনো খোলা পরিবেশে রাখুন।
কফি : কফির সর্বোচ্চ স্বাদ পেতে দানাগুলোর আর্দ্রতা অপসারণ করা হয়। কিন্তু ফ্রিজে রাখলে কফির গুণাগুণ ও সুগন্ধ নষ্ট হতে পারে। তাই কফির দানা কখনো ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। বরং কোনো বায়ুরোধক বক্স বা বোতলে ঢুকিয়ে সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রায় রাখা যেতে পারে।
রসুন : রসুন সবচেয়ে ভালো থাকে ৬০-৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে (১৫-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। ফ্রিজে না রেখে, বাতাস চলাচল করতে পারে এমন কোনো পাত্রে রসুন রাখতে পারেন। দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
সস : সসে ভিনেগার ও প্রিজারভেটিভ দেওয়া থাকে। তাই এ খাবারটি স্বাভাবিক পরিবেশেই ভালো থাকে। ফ্রিজে রাখলে বরং এর গুণাগুণ নষ্ট হতে পারে।
মধু : মধু ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। বেশি ঠান্ডা পরিবেশে এটি জমে যেতে পারে। সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রাই মধুর জন্য আদর্শ।
পাউরুটি : পাউরুটি ফ্রিজে রাখলে ভালো থাকে সত্যি, তবে আর্দ্রতা কমে গিয়ে রুক্ষও হয়ে যায়। ফ্রিজ থেকে বের করে খাওয়ার আগে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন। আর আপনি যদি নিয়মিত পাউরুটি খান, তাহলে ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। সাধারণ তাপমাত্রায় পাউরুটি দুই-এক দিন ভালো থাকে।
বাদামজাতীয় খাবার : বাদামজাতীয় খাবারের স্বাদ ঠিক রাখতে এগুলোকে ফ্রিজ থেকে দূরে রাখুন। বায়ুরোধক পাত্রে বাদাম সংরক্ষণ করা ভালো। এ উপায়ে অন্তত তিন মাস বাদাম ভালো থাকবে।
অ্যাভোকাডো : এ সবজিটি কাঁচা অবস্থায় সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রাতেই সবচেয়ে ভালো থাকে। পাকলে সবজিটি নরম হয়ে যায়। তখন এটি খাওয়ার উপযোগী হয়। তবে পাকা অ্যাভোকাডোর স্থায়িত্ব আরেকটু বাড়ানোর জন্য ফ্রিজে রাখা যেতে পারে।
স্টোন ফ্রুট : যেসব ফলের ভেতরে স্টোন বা দানা থাকে, সেগুলোকে স্টোন ফ্রুট বলে। যেমন পিচ, পাম, অ্যাপ্রিকোট। এ ফলগুলো ফ্রিজে না রাখাই ভালো। সাধারণ তাপমাত্রায় রাখলেই ফলগুলোর গুণাগুণ ঠিক থাকে।
জলপাই তেল : অলিভ অয়েল একটু ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় রাখা উচিত। এ তেল ফ্রিজে রাখলে ঘোলাটে ও ঘন হয়ে যায়।
ক্যাপসিকাম : নরম ক্যাপসিকাম খেতে ভালো লাগে না। তাই এ সবজিটি কখনো ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। ঠান্ডা তাপমাত্রায় ক্যাপসিকামের ক্রাঞ্চ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চকলেট : চকলেট সাধারণ তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশে এমনিতেই ভালো থাকে। এটিকে ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। বরং ফ্রিজে রাখলে অন্যান্য খাবারের ঘ্রাণ যোগ হয়ে চকলেটের আসল ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বেগুন : আপনি যদি কেনার কয়েক দিনের মধ্যে বেগুন খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে এটি এমনিতেই রেখে দিতে পারেন। ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। ফ্রিজে রাখলে বেগুনের স্বাদ ও ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে মাথায় রাখতে হবে, বেগুন কিন্তু বেশিদিন ভালো থাকে না। কেনার দুই-এক দিনের মধ্যে খেলে ভালো।
গুঁড়া মসলা : শুকনা গুঁড়া মসলা সাধারণ তাপমাত্রাতেই রাখা ভালো। ফ্রিজে রাখলে এগুলো দ্রুত নষ্ট হয়।